আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ও আদিবাসী

 ভূমিকা 

বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের অধিকার ও সমাজে তাদের অবদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিবছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয়। এই দিবসটি তাদের নিজেদের সংস্কৃতি উদযাপন, বৈচিত্র, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী বার্তা প্রচার করে। প্রতিনিয়ত আদিবাসীরা বিভিন্ন ধরনের যে বৈষম্য ও সহিংসতা এবং দারিদ্র্য এর মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হচ্ছে তা স্মরণ করা এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য। আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি ও সম্মানের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক আন্দোলনের সাথে দিবসটি সচেতনতা, সংহতি এবং ইতিবাচক পরিবর্তনকে উৎসাহিত করার জন্য দিনে দিনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে।



 ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস প্রস্তাব

১৯৭৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বের আদিবাসী নেতা কর্মীদের নিয়ে একটি বড় ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি আদিবাসী জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য একটি বার্তা প্রদান করে।  এর মূল লক্ষ্য ছিল আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের জন্য একত্রিত হওয়া। এই সময় আদিবাসীদের সংস্কৃতি, অধিকার এবং তাদের সংগ্রামকে সম্মান জানাতে উৎসর্গকৃত একটি  দিবসের ধারণা প্রস্তাব করা হয়। এই ধারণা থেকে আদিবাসী দিবসের সূচনা শুরু হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হতে থাকে। এরপরে ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে আদিবাসী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৪৯/২১৪ বিধিমালায় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের স্বীকৃতি পায় এবং ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।



আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন

 সারা বিশ্বে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় ৯ আগস্ট তারিখে। এই দিন পৃথিবীর ৫টি মহাদেশের ৯০ টিরও বেশি দেশে বসবাসরত প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক আদিবাসী জনজাতির প্রায় ৩০কোটি এর অধিক আদিবাসী মানুষ এই দিবসটি পালন করে থাকে। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত হয় আদিবাসী বর্ষ অর্থাৎ জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে আদিবাসী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব আদিবাসী দিবসটি পালন করার জন্য ৪৯/২১৪ বিধিমালয় স্বীকৃতি পায়। এরপর থেকে প্রতিবছরই ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এই দিবসে আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভূমির অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার এবং নাগরিক মর্যাদার স্বীকৃতি ইত্যাদি দাবির কথা তুলে ধরে। এই দিবসটি পালনের জন্য সরকারিভাবে প্রতিটি দেশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে  হবে। 

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ও আদিবাসী


আদিবাসী দিবসে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ গুলোর মধ্য অন্যতম বিষয়গুলো হলো-


 আদিবাসীদের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা 

আদিবাসী জনগণ বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকদিন ধরেই এদেশে এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে। এই দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভাষা এবং ধর্ম রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের আদিবাসীদের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ দেশের অর্থনীতিতে এরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আর এটি প্রতিষ্ঠিত হলে আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব বিষয়গুলিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবেশ  বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আদিবাসী মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি কমিশন গঠনের মাধ্যমে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এই স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, বিশেষ করে স্বায়ত্তশাসন আইন প্রণয়ন, আদিবাসীদের জন্য একটি সাহিত্য শাসন পরিষদ গঠন, স্বায়ত্বশাসন অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। আদিবাসীদের জন্য স্বায়ত্বশাসন  প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশের জন্য সেটি হবে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির একটি মাইল ফলক।


  বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করা 

 বাংলাদেশের আদিবাসীরা শত শত বছর ধরে এই দেশে বংশ পরস্পরায় বসবাস করে আসছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা রয়েছে, তাদের রয়েছে নিজস্ব ধর্ম। কিন্তু কারণে-অকারণে অনেক সময় এদেশের আদিবাসীরা বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হন। এই বৈষম্য ও নিপীড়ন তাদের ন্যায্য অধিকারকে লংঘন করে। এটি তাদের সম্মান এবং মর্যাদা কে ক্ষুন্ন করে, শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। সেই জনগণের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নিপীড়ন বন্ধের জন্য সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য এ দেশের সরকারকে অধিকার  প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য আইন  প্রণয়ন শিক্ষা ও তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।


 আদিবাসী জনগণের সংস্কৃতি ও ভাষা সংরক্ষণ করা 

বাংলাদেশের আদিবাসী মানুষের সংস্কৃতি এবং ভাষা সম্পর্কে আদর্শ পরিচিয় রক্ষার জন্য এবং দেশের সমৃদ্ধির ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ  প্রয়োজন।  নিজস্ব সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার ও ভাষা আদিবাসীদের মর্যাদা এবং সম্মানকে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এটি তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  আদিবাসীদের কৃষ্টি কালচার, সংস্কৃতি এবং ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য সরকারকে বিশেষভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রথমে তাদের ভাষা ও ঐতিহ্যকে সমর্থন করতে হবে, ভাষার প্রচারণা সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আদিবাসী জনগণের সংস্কৃতি এবং ভাষাকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।


 

ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা করা 

 আদিবাসীদের চলমান অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো ভূমি অধিকার। প্রতিনিয়ত আদিবাসীরা যাদের নিজেদের পৈত্রিক জমির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস এই সংগ্রামের উপর বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ প্রদান করে, যে সকল সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়া কিংবা নিজের ভূমি হারানো থেকে রেহাই পেতে পারে। আর এটি বাস্তবায়নের জন্য নিজ নিজ দেশের সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।


 আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো সংশোধন ও ঘোষণা

 আদিবাসীদের অধিকার সমর্থন করে এ ধরনের আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো সংশোধন সংযোজন এবং সেটি ঘোষণা করতে হবে, এই আইন আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সদাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  কারণ আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা না থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অবহেলা ও টালবাহানা করে। জাতিসংঘের ঘোষণা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কনভেনশন নং ১৬৯ আইনি কাঠামোগুলো আদিবাসীদের অধিকার ও স্বীকৃতির জন্য একটি শক্ত ভিত্তি হলেও এই আইন গুলোর সংশোধন ও পরিবর্তন করা দরকার, বিশেষ করে “আদিবাসী’ শব্দের পূর্ণাঙ্গ ও যথার্থ ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠা ও ঘোষণা করতে হবে যাতে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সহজ হয়।


 বাংলাদেশে আদিবাসী দিবস পালন

 বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে আদিবাসী দিবস পালন করে আসা হচ্ছে ১৯৯৪ সাল থেকে। এই দিবসটি পালনের জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলের তখনকার  সময়ের একমাত্র  সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে দিবসটি পালন করার জন্য হাজার হাজার আদিবাসী জনগণ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহীতে সমবেত হয় এবং তাদের দাবির কথা, তাদের অধিকারের কথা, ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবসের মাধ্যমে সরকারকে জানানোর চেষ্টা কর।  সেই সময়ের ক্ষমতাসীন সরকার আদিবাসীদেরকে অস্বীকৃতি জানায় এবং সরকার ঘোষণা করে বাংলাদেশের কোন আদিবাসী নেই। ফলে আদিবাসীদের আন্দোলন সংগ্রাম আরো জোরালো হয়ে ওঠে।  এরপর ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠিত হওয়ার পর থেকে বেসরকারিভাবে বৃহৎ আকারে আদিবাসী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নওগাঁ, নাটোর, রংপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও রাজশাহী অঞ্চলে আদিবাসীদের বিভিন্ন জাতিসত্তা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এ সকল আদিবাসী জনগণ বর্তমানে আদিবাসী দিবসের তাৎপর্য বুঝতে পারছে এবং আদিবাসী দিবস পালনে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করছে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ সরকার আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচিত হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ সংশোধনী অধিবেশন এর মাধ্যমে এবং তাদেরকে নৃতাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করেছে। দেশের  প্রায় ৪০ লক্ষ আদিবাসী দিবসটি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করছে এবং পালনের জন্য চেষ্টা করছে। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, নাগরিক মর্যাদা, ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে বলে আদিবাসী জনগণ মনে করছে।

  এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ আদিবাসীর শব্দ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এদেশের সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এর মাধ্যমে দেশের আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় বা উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশের আদিবাসীরা তাদের নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। জাতিসংঘেও তাদের  দাপ্তরিক কাজে  ইন্ডিজেনাস বা আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় করানোর কথা বলা হয়েছে। এ কারণেই আদিবাসীরা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে । 


 আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৩ ও বাংলাদেশ

 বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৩ বেসরকারি ভাবে পালন করা হবে। একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এদেশের সরকার আদিবাসীদেরকে নৃতাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং সরকারি ভাবে আদিবাসী শব্দটি যাতে কোন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা না হয় সেজন্য নোটিশ জারি করেছে। কিন্তু দেশের প্রায় ৪০ লক্ষ আদিবাসী তাদের নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচিতি করাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আদিবাসীদেরকে নৃতাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করানো তাদের অধিকারকে খর্ব করার নামান্তর ছাড়া কিছু নয়। এদেশের আদিবাসীরা নিজের ভূমি  হারিয়ে পরবাসী হচ্ছে, অপরের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, শিক্ষা ও চাকুরী  পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের আদিবাসী সংগঠনগুলো বেসরকারিভাবে এই দিবসটি পালনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও  জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও অন্যান্য আদিবাসী সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের মূলসুর হল- “স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে আদিবাসী যুবক। [Indigenous Youth as Agents of Change for Self- determination”] এ বছর আদিবাসী দিবসের মূল থিম- আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে আদিবাসী যুবকরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা তুলে ধরা। বিশ্বের আদিবাসী যুবকেরা তাদের নিজেদের ভূমি অধিকার এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য যে লড়াই সংগ্রাম করে পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলন করে প্রথমে থাকে, সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।


FAQ

  আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস কি?

 আদিবাসী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভূমি  সমস্যা সমাধান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান, তাদের নিজেদের পরিবেশের উন্নয়ন ইত্যাদি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে যে দিবসটি আদিবাসীরা এখন পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছে সেটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে আদিবাসী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব আদিবাসী দিবসটি পালন করার জন্য ৪৯/২১৪ বিধিমালয় স্বীকৃতি পায়। উল্লেখ্য ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ প্রথম আদিবাসী দশক ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এবং ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় আদিবাসী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। 


 আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস  পালনের উদ্দেশ্য কি?

 সারাবিশ্বে আদিবাসী জনগণের অধিকার, শিক্ষা অধিকার, সংস্কৃতি ও ভাষা সংরক্ষণের অধিকার ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা এবং গণ সচেতনতা সৃষ্টি করা বিশ্ব আদিবাসী  দিবস, বর্ষ ও দশক পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

 আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস কত সাল থেকে পালন করা হয়?

  বিশ্বের অবহেলিত আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে প্রথম আদিবাসী  দশক হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে সারাবিশ্বে আদিবাসী দিবস স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করা হয়ে হয়।

 কিভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয়?

সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন, ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, শিল্প প্রদর্শনী, আদিবাসী নাচ, গান এবং আদিবাসী গোষ্ঠীদের সমাবেশের মাধ্যমে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। তবে একথাও বলতে হয় যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন ধরনের  হওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।  এই সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আদিবাসীদের ঐতিহ্য, ভাষা, সংগীত এবং নৃত্য প্রদর্শন এর মাধ্যমে উদযাপন করা হয় যা আদিবাসী সংস্কৃতির গভীর উপলব্ধি এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

 সারা বিশ্বে মোট আদিবাসী সংখ্যা কত?

 সারা বিশ্বে আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি এর অধিক। প্রায় ৫ হাজারের অধিক জাতিগোষ্ঠী আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিশ্বের প্রায় .৭০ টি দেশে বসবাস করে, যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য রয়েছে। 

শেষের কথা

 আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের তাৎপর্য আদিবাসীদের নিকট এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে এই দিবসটি পালনের জন্য আদিবাসী  সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, সম্মান এবং উপলব্ধি প্রচারের ক্ষেত্রে অপরিসীম মূল্য রাখে। এটি একটি শক্তিশালী মিলন মেলা হিসেবে কাজ করে যেখানে আদিবাসীদের কৃতিত্ব এবং অবদানের কথা তাদের চলমান জীবন সংগ্রামের কথা উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকার পক্ষকে অবশ্যই আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে, আদিবাসীদের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলিকে সমর্থন করতে হবে এবং ভবিষ্যতে আদিবাসীরা যাতে একটি সুন্দর এবং ন্যায় সঙ্গত বিশ্ব তৈরি করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করতে হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন