শুরুর কথা
আজকের এই নিবন্ধে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুনাগুন এবং খেজুর এর পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করব। খেজুর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার এবং এর পুষ্টিগুণ অত্যন্ত বেশি। চলুন সহজলভ্য এই খাবারের উপকারী গুণ সম্পর্কে জেনে নেই। খেজুর শুধুমাত্র সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি এমন একটি পুষ্টিকর ফল যা বহু শতাব্দী ধরে পৃথিবীর মানুষ এই ফলের স্বাদ ও উপকারী গুণ উপভোগ করে আসছে। এই খেজুরের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা ৬০০০ বছরের পুরনো। মানুষ আর খেজুর প্রথম কবে মুখোমুখি হয় তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। এই পৃথিবীতে প্রায় ১০০ প্রজাতি খেজুরের চাষ করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, আকার স্বাদ ও বর্ণের দিক দিয়ে প্রতিটি খেজুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। আমরা আজ খেজুর খাওয়ার পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা, খেজুরের পুষ্টি উপাদান, দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত কোন খেজুরের উপকার বেশি, খেজুরের প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা আমাদের সাথেই থাকবেন।
বিভিন্ন ধরনের খেজুর
খেজুর সাধারণত ২ ধরনের পাওয়া যায় একটি নরম রসালো খেজুর আর আরেকটি শুকনো খেজুর। তবে নামকরণের দিক থেকে যে সমস্ত খেজুর খুব জনপ্রিয় সেগুলো হলো-
মেজুলা- এটি মরক্কোতে উৎপন্ন হয় এবং সাইজে একটু বড়, খেতে খুব সুস্বাদু।
হ্যালোয়ি- মিষ্টি এই খেজুরগুলো দেখতে ছোট ছোট।
দিগেত নূর- আলজেরিয়ায় উৎপন্ন এই প্রজাতি খেজুর গুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রজাতি। এই খেজুর খুব একটি রসালো নয় এবং শুকনো নয়।
হায়ানি- এই খেজুরগুলো কালচে লাল এবং নরম রকমের হয়। মিশরে এই খেজুর উৎপন্ন বেশি হয়, তবে বর্তমানে বাংলাদেশেও এই খেজুর চাষ করা হচ্ছে।
বারহি- ইরাকে উৎপন্ন এই খেজুরের রঙ হলদে টাইপের। এই জন্য এই খেজুর কে অনেকেই হলুদ খেজুর বলেন। এর ফল গুলো নরম আর আঁশযুক্ত।
ইতেমা- আলজেরিয়াতে উৎপন্ন এই খেজুর খেতে খুব মিষ্টি। ডিম্বাকৃতি এই খেজুরের আকার একটু বড় সাইজের হয়।
মিগ্রাফ- ইয়েমেন এর দক্ষিণ ভাগে উৎপন্ন হয় এই খেজুর। এর সাইজ বেশ বড় এবং রং সোনালী ও কমলার মিশেল রংয়ের।
মরিয়ম খেজুর বা কামরাঙ্গা
এই খেজুর দেখতে অনেকটা কামরাঙ্গার মত। এ কারণেই অনেকেই একে মরিয়ম বা কামরাঙ্গা খেজুর বলে থাকেন। অত্যন্ত গুনে ও মানে মিষ্টি এ খেজুরটি।
খুরমা খেজুর
এই খেজুর এর রং একটু লালচে টাইপের। এই খেজুর কেই রং করে ফর্সা করা হয় অর্থাৎ রাসায়নিক উপাদান দিয়ে এই খেজুরকে সাদাটে করা হয়ে থাকে। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এই খেজুরের একটু কস আছে। কাজেই এই খেজুর ক্রয়ের সময় ভালো করে দেখে নেওয়া উচিত।
আজওয়া- এই খেজুর দেখতে কালো, ছোট আকারের এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
জাহিদি- এ খেজুরের খোসা বেশ শক্ত দেখতে সোনালী রঙের। এই খেজুরের স্বাদ বাদাম এর মত, তবে এর মিষ্টি একটু কম।
আমবার- সাইজে বড় এই খেজুরটির বিচি অনেক ছোট খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
সাফাউয়ি- দেখতে কালো ও ভিটামিনে ভরপুর, অত্যন্ত সুস্বাদু ,এই খেজুর মদিনাতে চাষ হয়।
সুক্কারি- সৌদি আরবে উৎপন্ন এই খেজুর দেখতে শুকনো, কিন্তু পুষ্টিগুণের জন্য অত্যন্ত পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলা ও ঐতিহ্য
সবচেয়ে দামি খেজুর
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর হলো আজওয়া। কালো ও মাঝারি আকৃতির এই খেজুর নরম অনেক সুস্বাদু। এই খেজুরের গায়ে সাদা রেখা দেখা যায় ফলে এই খেজুর চিনতে সহজ হয়।এই খেজুর এর দাম প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দামের বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে যে খেজুরটি আছে, তার নাম মেডজুল নামের খেজুরটি। এর দাম প্রতি কেজি প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
খেজুর খাওয়ার উপকারী গুণ
খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি খাবার, যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে ক্যারোটিনয়েডস ও ফেনোলিক এসিড নামে দুই ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যার কারণে কেরোটিনয়েড হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। ফেনোলিক এসিড হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থ থাকার কারণে দেহের হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে, হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। খেজুরে ফ্ল্যাভোনয়েডস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে ডায়াবেটিসের মত ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খেজুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই সকল পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেজুরে থাকার কারণে খেজুর একটি অনন্য খাবার হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে মধ্যযুগে অনেক নাবিক ও বণিক গন সাগরে ভাসমান থাকা অবস্থায় দিনের পর দিন খেজুর খেয়ে পার করে দিতেন। সেই সময়ে স্কার্ভি রোগের প্রকোপের হাত থেকে শুধুমাত্র খেজুর খাওয়ার কারণে তারা স্কার্ভি রোগের হাত থেকে রেহাই পেতেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
খেজুরের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে, তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের ডায়েট এ খেজুর অন্তর্ভুক্ত করার সময় তাদেরকে ক্যালরি গ্রহণের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খাওয়া হলে হজমে ব্যাঘাত এবং ডায়রিয়ার মত রোগ হতে পারে। সুতরাং খেজুর পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুর উপযুক্ত কিনা?
একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খেজুর খাওয়া অবশ্যই উপযুক্ত, তবে পরিমিত অবস্থায়। খেজুর চিনির একটি প্রাকৃতিক অন্যতম উৎস। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে, যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সুতরাং একজন ডায়াবেটিস রোগী পেশাদার চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে খেজুর গ্রহণ করতে পারবেন।
খেজুর কিভাবে প্রক্রিয়া জাত করবেন?
খেজুর কে সতেজ রাখতে আপনি এটি প্রক্রিয়াজাত করে রাখতে পারেন। তবে কিভাবে করবেন? প্রথমে আপনাকে একটি বায়ুরোধী পাত্র নিতে হবে এবং এটি শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। এজন্য আপনি রেফ্রিজারেটর এ খেজুর সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি সারাদিনে ৪ থেকে ৫টি খেজুর খেতে পারেন। ৪ থেকে ৫টি বা ১০০ গ্রাম খেজুর আপনার শরীরের জন্য প্রায় ২৭৭ ক্যালোরি খাদ্য উপাদান এর যোগান দেবে। তবে মনে রাখবেন, এর বেশি খাওয়া হলে এবং আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে ওজন কমার বদলে ওজন দ্রুত বাড়তে পারে।
উপসংহারে, আমরা বলতে পারি খেজুর পুষ্টির একটি অন্যতম পাওয়ার হাউস। হজমে সহায়তা করা থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি সকল ধরনের খাদ্য উপাদান এই খেজুরে আমরা পেতে পারি। সুতরাং খেজুর কে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য একটি অন্যতম প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে বেছে নিতেই পারি।