ভূমিকা
দাম্পত্য জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদের শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন(Testosterone Hormone) এর গুরুত্ব অনেক বেশি। টেস্টোস্টেরন হরমোন হলো সেক্স হরমোন, যা নারী এবং পুরুষের উভয়ে শরীরের মধ্যেই থাকে। তবে নারীর শরীরের মধ্যে এই হরমোন এর পরিমাণ একটু কম থাকে। এই হরমোনের প্রভাবে পুরুষ তার শরীরের মধ্যে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন অনুভব করে। তার শরীরের চুলের গঠন, পেশির গঠন, দাঁড়ি, গোঁফ, গলার আওয়াজ ইত্যাদি সবকিছুই এই হরমোনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই হরমোন বয়ঃ সন্ধিকালে বালকের শরীরের মধ্যে নিয়ে আসে পুরুষোচিত মনোভাব। এছাড়া শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবং সেক্স ড্রাইভের জন্যও এই হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই হরমোন মানবদেহের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড(Adrenal Gland) ও টেস্টিক্যাল থেকে নিঃসৃত হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুরুষ শরীরের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পর্যাপ্ত মাত্রায় থাকতে হবে। কারণ এই হরমোনই পারে শারীরিক অনেক সমস্যা থেকে দূরে রাখতে। এই হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন সেক্সের ইচ্ছা কমে যাওয়া, শারীরিক ক্লান্তিবোধ, পেশী সমূহ দুর্বল হয়ে যাওয়া ও ব্যথা করা ইত্যাদি। তাই প্রতিটি পুরুষ মানুষকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা যাতে কমে না যায় সেদিকে। এই ব্লগ পোস্টে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য আমরা কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি এবং কিভাবে এর অসামঞ্জস্যতা দূর করা যায় সেই সম্পর্কে আলোচনা করব।
কিভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি করা যায়?
আমাদের শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়া এর অর্থ হলো টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ এর মাত্রা কমে যাওয়া। অর্থাৎ শরীরের যে অঙ্গ থেকে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বা ক্ষরণ হয় সেখানে স্বাভাবিকের চাইতে ক্ষরণ বা উৎপাদন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় এই হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়াকেই টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ বা হ্রাস বলা হয়।
শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে গেলে শারীরিক নানা ধরনের সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, নিঃসঙ্গতা, মানসিক উদ্বেগ, কর্ম স্পৃহা ইত্যাদি কমে যায়। অবশ্য টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত নেশা করা কিংবা বিপদজনক কোন কাজ করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত কোন কাজে নিজেকে নিমজ্জিত রাখা, উত্তেজক ঔষধ সেবন করা ইত্যাদি কারণেই অনেক সময় টেস্টোস্টেরন হরমোন হ্রাস পায়। যে কারণেই টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ কমে যাক না কেন সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে হবে একজন সক্ষম পুরুষের জন্য। আর এটি চিকিৎসার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে এই হরমোনের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। তবেই একজন পুরুষের পুরুষত্ব বহাল রাখা সম্ভব। এবার আমরা দেখে নেই কি কি উপায়ে এই হরমোনের মাত্রা বাড়ানো যায়? টেস্টোস্টেরন হরমোন অনেক সময় ইনজেকশন কিংবা ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এছাড়াস্বাভাবিক প্রাকৃতিক উপায়ে এবং খাদ্য অভ্যাস এর মাধ্যমে আপনি এই হরমোনের ক্ষরণ বা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন। .
স্বাভাবিক প্রাকৃতিক উপায়ে বৃদ্ধি
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
কাইক পরিশ্রম বা শরীর চর্চার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি করতে পারেন। আপনার শরীরের মধ্যে যদি অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি থাকে তবে আপনি নিয়মিত শরীর চর্চা ও অথবা কাইক পরিশ্রমের মাধ্যমে হরমোন খরন বৃদ্ধি ঘটাতে পারেন। এছাড়া আপনাকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা একটানা ঘুমাতে হবে, এতে আপনার শরীরের হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি পাব পাবে।
মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধূমপান করলে শরীর থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর ক্ষরণ কমে যায়। কাজেই মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন
মনের উপর চাপ বাড়লে বা শান্তি কমে গেলে শরীর খারাপ হয়ে যায় এবং মনটা খিটখিটে হয়ে যায়। কাজেই আপনার অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন। মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে এবং শরীর ভালো থাকলে আপনার যৌন জীবনও সুস্থ থাকবে এ কারণেই সমস্ত ক্লান্তি দূর করে নিজের মনটাকে মানসিক চাপমুক্ত রাখার জন্য সর্বদাই চেষ্টা করুন।
ওজন কমানো
আপনার শরীরের উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন বেড়ে গেলে বা শরীরে চর্বি জমলে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ বিপুলভাবে কমে যায়। এজন্য এই হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণ বা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্তই দরকার। একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট শুরু করুন শরীর চাঙ্গা থাকলে হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে।
রৌদ্রে থাকুন
ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন মাত্রা বা ক্ষরণ কমে যেতে পারে। যে সকল খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, সেই সকল খাবার গুলো নিয়মিত খাবার মেনুর সাথে যোগ করুন এবং নিয়মিত খাওয়া চেষ্টা করুন। এছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করার জন্য নিয়ম করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকুন, এতে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হবে।
জীবনাচার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে
দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক নিয়ম কানুন আচার-আচরণ মেনে চলতে হবে, যেমন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য নিয়মিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ব্যায়াম করা ও শরীরচর্চা ইত্যাদি জীবনচার পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক উদ্দীপনাকে বাড়াতে পারি। সেই সাথে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ব্যালেন্সটাকে ঠিক রাখতে পারি।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
শারীরিক সমস্যাগুলো যদি বয়স বাড়ার কারণে না হয়ে অন্য কোন অসুখ বিসুখ কিংবা কোন উত্তেজক ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে সেই বিষয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
অতিরিক্ত নেশা ও উত্তেজক খাবার বর্জন
টেস্টোস্টেরন হরমোনের ব্যালেন্সটা কি ঠিক রাখার জন্য অতিরিক্ত নেশা পান বর্জন করতে হবে, উত্তেজক খাবার যেগুলো খেলে শরীরের উত্তেজনার অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় সেই সমস্ত খাবার বর্জন করতে হবে, তাহলেই এই হরমোন এর মাত্রা ব্যালেন্সের মধ্যে থাকবে।
খাদ্য অভ্যাস এর মাধ্যমে
যে সকল খাবারে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, সেই সকল খাবারগুলো নিয়মিত ভাবে নিয়ম করে খেতে পারেন, এতে আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে। চলুন জেনে নেই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি বা ক্ষরণ কোন কোন খাবারের মধ্য থেকে আমরা পেতে পারি-
আদা
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য আদা বিশেষভাবে উপকারী একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন আদা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম। কাজেই আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার খাবারের মেনুতে আদা যোগ করে নিতে পারেন।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে আছে ইন্ডল থ্রি কার্বিনল। এছাড়া এটিতে আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতামত- বাঁধাকপির এই উপাদান গুলো টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু
মধু এমন একটি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান, যেখানে ভিটামিন থেকে শুরু করে খনিজ লবণ লৌহ ইত্যাদি শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো আপনি পেয়ে যাবেন। তাই নিয়মিত আপনি যদি মধু খেতে পারেন তাহলে শরীরের হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে এমনটাই মন্তব্য করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ।
পালং শাক
শুনে দেখা গেছে ওয়েস্ট্রেনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমাতে পারে পালং শাক। এই পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামি, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। আর এ কারণেই এই সবজি আপনার টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সাহায্য করবে।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা শরীরের টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার পরে একটি করে পেঁয়াজের কোষ খেতে পারেন, তাহলে উপকার পেতে পারেন।
উপসংহার
টেস্টোস্টেরনের হরমোন আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন। এই হরমোন এর মাত্রা কমে যাওয়া যেমন শরীরের জন্য শুভ নয়, তেমনি এর মাত্রা শরীরে বেশি হয়ে যাওয়াটাও শরীরের জন্য শুভ নয়। সুতরাং আপনি যদি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক ও সঠিক রাখতে চান এবং সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। মনে রাখবেন- চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কিংবা নিজে নিজেই চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করা একজন অচিকিৎসকের মোটেও উচিত নয়।