ভূমিকা
আপনি কি অলস বোধ করছেন, শরীরে সেক্স ড্রাইভের অভাব বোধ করছেন বা পেশীর দুর্বলতার সাথে সাথে সর্বদাই পেশীতে পেশীতে ব্যথা অনুভব করছেন? হতে পারে এটি আপনার শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে। যদি এটিই হয়ে থাকে, তাহলে বাজারে প্রচুর পরিপূরক এবং ওষুধ পাওয়া যায়। আপনি সেটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এই নিরাময় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তবে আজ আসুন আমরা জানবো হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোন স্বাভাবিক রাখার কিছু ঔষধ সম্পর্কে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হল- একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এর মানে হলো- কোন একটি পদার্থ যা একটি নির্দিষ্ট উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে এবং সেই একই উপসর্গগুলি চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলো তরলীকরণ এবং ঝাঁকুনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয় এবং লক্ষণ অনুযায়ী রোগীর শরীরে প্রয়োগ করলে রোগ লক্ষণ গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যে সকল ঔষধ গুলো খুব বেশি ব্যবহার করা হয় সেগুলো এখন আমরা জেনে নেব।
কেন হোমিওপ্যাথিক ব্যবস্থা?ন
এটি নিরাপদ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ঔষধ, যা একজন সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে নির্দিষ্ট উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে একই উপসর্গের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন হওয়ার কারণে এই ঔষধ ব্যবহার করা খুবই নিরাপদ। এই পদ্ধতির ঔষধ গুলো উদ্ভিদ, খনিজ, এবং প্রাণিসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় এবং অ্যালকোহল ও পানির সাথে পাতলা করে বারবার ঝাঁকি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এই ঔষধ গুলো শিশু এবং শিশু সহ এবং সকল বয়সের মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
সহজে সেবনযোগ্যহোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করা খুবই সহজ। হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোন রোগের নিরাময় সাধারণত প্রাকৃতিক পদার্থ যেমন উদ্ভিদ বা খনিজ থেকে তৈরি করার কারণে বেশিরভাগ লোকের জন্য এটি সেবন করা খুব সহজ এবং নিরাপদ।
সহজ লভ্যএই ঔষধ আপনি খুব সহজেই আপনার আশেপাশে পেয়ে যাবেন। এছাড়া এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোম্পানিতে এই ঔষধের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাহোমিওপ্যাথিক ঔষধ সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘদিন ধরে সেবন করার মতো সুবিধা থাকার কারণে এই ঔষধ ও পদ্ধতির প্রতি দিনকে দিন মানুষ এর প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। এছাড়া রোগ নিরাময়ের জন্য এই পদ্ধতি শরীরের নিজস্ব প্রতিক্রিয়া গুলিকে উদ্দীপ্ত করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তিকে বৃদ্ধি করে। এ কারণে যে কোন বয়সে এই ঔষধ নিরাপদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করা যায়।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ!
হোমিওপ্যাথি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা। রোগ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে সকল ধরনের রোগের চিকিৎসা করা হয়। যার কারণে এর কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আছে যা টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। চলুন এবার জেনে নেই, কোন কোন ঔষধ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
Succus Testculris- এই ঔষধটি একটি প্রাণীদেহের অণ্ডকোষ থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি শরীরের কম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা, পুরুষত্বহীনতা এবং নারী পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।
Sepia- এই ঔষধটি সামুদ্রিক মাছ কাটল ফিস এর চর্বি থেকে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত যাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা একেবারেই কম, তাদের শরীরের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। লম্বা ধাঁচের পুরুষ অথবা মহিলা কৃষ্ণবর্ণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ঔষধটি অধিক কাজ করে। সাধারণত যৌন দুর্বলতা, বন্ধ্যাত্ব এবং টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য এই ঔষধটি অত্যন্ত উপযোগী।
Agnus castus- একটি বিশুদ্ধ গাছের নির্যাস থেকে এই ওষুধটি তৈরি করা হয়। নারী পুরুষ উভয়ের যৌন সমস্যা, টেস্টোস্টেরনের সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব, মেহ-প্রমেহ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসার জন্য প্রসিদ্ধ।
Lycopodium clava- লাইকোপোডিয়াম ক্ল্যাভাটাম হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি শরীরের ডানদিকে অধিক ক্রিয়া প্রকাশ করলেও এর অন্যতম গুন হল টেস্টোস্টেরন হরমোনের ব্যালেন্স ঠিক রাখা। এই ঔষধটি বিশেষভাবে শরীরের ক্লান্তি কম লিবিডো এবং স্মৃতিশক্তি হীনতা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ করে। এছাড়া মানসিক উদ্বেগ দূর করতে এবং সামগ্রিক মানসিকতা সুস্থ রাখতে বিশেষ কার্যকরী এই ওষুধটি।
Avena Sativa- বন্য ওট নামক উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুত এভেনা সেটাইভা নামক বহুল জনপ্রিয় হোমিওপ্যাথিক এই ঔষধটি। যৌন দুর্বলতা, পুরুষত্বহীনতা, বিশেষ অঙ্গের নিস্তেজ ভাব এবং অকাল বীর্যপাতের জন্য প্রসিদ্ধ এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি।
Natrum Muriticum- এই ঔষধটি সামুদ্রিক লবণ থেকে তৈরি করা হয়। এই ওষুধের অন্যতম লক্ষণ হল রোগী লবণ খাওয়ার প্রতি দুর্বল থাকে অর্থাৎ বেশি বেশি লবণ খায়। যৌন দুর্বলতা, ধ্বজভঙ্গ, অকাল বীর্যপাত, নিস্তেজ ভাব ইত্যাদি লক্ষণে এই ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ হওয়ার কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য একটি অন্যতম উপায়ে হতে পারে। তবে টেস্টোস্টেরন হরমোন যদি আপনার শরীরে কম হয়ে থাকে এবং এর জন্য আপনি বিভিন্ন রকমের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই একজন হোমিওপ্যাথিক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন এবং আপনার রোগের নিরাময় নিশ্চিত করবেন। মনে রাখবেন হরমোন জনিত কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনি নিজে নিজে কখনো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন, কারণ সঠিক ঔষধ ও সঠিক মাত্রা ঔষধ সেবন না করলে আপনার রোগ লক্ষণের অবনতি হতে পারে।