বিকাশ একাউন্ট কীভাবে খুলবেন?

ভূমিকা 

আপনি যদি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে থাকেন এবং আপনার আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করার জন্য একটি সুবিধা জনক এবং নিরাপদ মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রয়োজন মনে করে থাকেন, তাহলে বিকাশ একাউন্ট খোলা আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং পছন্দের হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে কিভাবে একটি বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আশা করি এরপর থেকে আপনার বিকাশ একাউন্ট খোলা অত্যন্ত সহজ হবে এবং খুব সহজভাবে আপনি বিকাশের মাধ্যমে মোবাইল আর্থিক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।


লেনদেন এর জন্য বিকাশকে কেন বেছে নেবেন?

বিকাশ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা সারা বাংলাদেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অত্যন্ত সুবিধাজনক ভাবে এবং নিরাপদ উপায়ে ডিজিটাল পেমেন্ট সমস্যার সমাধান করে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় ৭কোটি এর বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারীরা এর সাথে সম্পৃক্ত এবং বিকাশ এর মাধ্যমে তাদের আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে থাকে। লেনদেন সহজ এবং নিরাপদ বিধায়, এই মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ইতিমধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাজেই বিকাশ একাউন্ট খোলা আপনার জন্য হতে পারে একটি আর্থিক লেনদেনের সহজ, নিরাপদ ও পছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এবার আমরা জেনে নেব বিকাশ একাউন্ট খুললে আপনি কি কি ধরনের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন সেই সম্পর্কে-

সহজে এক্সেস করা যায়

বিকাশ সারা বাংলাদেশে ২ লক্ষ এর বেশি এজেন্ট পয়েন্ট এর মাধ্যমে তাদের পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট এক্সেস করে থাকে, যা অবিশ্বাস্য হলেও অত্যন্ত সত্য। আপনি দেশের গ্রামীণ যেকোনো এলাকা কিংবা শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজেই আপনার আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য একজন বিকাশ এজেন্ট খুঁজে পাবেন। এই এক্সেস সুবিধার জন্য বিকাশ, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বহুমুখী লেনদেন সুবিধা

বিকাশের রয়েছে বহুমুখী লেনদেন এর সুবিধা। বিকাশ আপনাকে অর্থ পাঠাতে এবং অর্থ গ্রহণ করতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া বিল পরিশোধ করতে, অনলাইন এবং অফলাইন কেনাকাটা করতে, এমনকি আপনার মোবাইল ফোন রিচার্জ করার মত আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে থাকে। এই বহুমুখী লেনদেন সুবিধা বিকাশকে করে তুলেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বিকাশ আপনার আর্থিক নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা আপনার একাউন্ট এবং লেনদেনগুলোকে জালিয়াতি এবং অনঅনুমোদিত অ্যাক্সেস থেকে রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আপনার যাবতীয় লেনদেন সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে এটি আপনি নিশ্চয়ই আশা করতে পারেন।


বিকাশ একাউন্ট কীভাবে খুলবেন?

আপনি কিভাবে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলবেন সেই সম্পর্কে আমরা কয়েকটি ধাপের কথা আপনার সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করব। এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই আপনার একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন যাওয়া যাক শুরু করি-

ধাপ ১ঃ বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন

একটি বিকাশ একাউন্ট খুলতে আপনাকে আপনার স্মার্টফোনে গিয়ে বিকাশ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। অ্যাপটি এন্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় ডিভাইসের জন্য ডাউনলোড করতে হবে এবং আপনি এটি Google অ্যাপ স্টোর এ সহজে খুঁজে পেতে পারেন। একবার ডাউনলোড এবং ইন্সটল হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য আপনাকে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে।

ধাপ ২ঃ নিবন্ধন

বিকাশ অ্যাপটি ওপেন করার পর আপনাকে একটি নতুন একাউন্ট এর জন্য নিবন্ধন করতে বলা হবে। আপনার সামনে ওপেন হওয়া স্ক্রিনে নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং আপনার পুরো নাম, মোবাইল নাম্বার এবং একটি বৈধ ইমেইল এড্রেস সহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করুন।

ধাপ ৩ঃ যাচাই করণ প্রক্রিয়া

আপনার নিবন্ধনকৃত বিশদ বিবরণী পূরণ করার পরে, আপনার একাউন্ট যাচাই করার জন্য আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর যাচাই করতে হবে। বিকাশ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলার সময় আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বার এ একটি যাচাই করার কোড এসএমএস এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। যাচাই করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য অ্যাপ এর মধ্যে নির্ধারিত বক্সে আপনার ফোনে পাঠানো কোড নম্বরটি পূরণ করুন।

ধাপ ৪ঃ একটি গোপন পিন সেট করুন

আপনার মোবাইল বিকাশের লেনদেনকে নিরাপদ রাখার জন্য আপনাকে একটি গোপন পিন নাম্বার সেটাপ করতে হবে। মোবাইলে যাচাই করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরই আপনার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টের জন্য একটি গোপন পিন নাম্বার সেট করার জন্য বলা হবে। আপনাকে একটি ইউনিক ধরনের পিন নাম্বার নির্বাচন করতে হবে, যা শুধু আপনি জানবেন এবং এই পিন নাম্বারটি গোপন রাখবেন। প্রতিটা লেনদেন সম্পূর্ণ করার সময় এই পিন নাম্বার আপনার প্রয়োজন হবে এবং এটি আপনাকে আর্থিক লেনদেন এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করবে।

ধাপ ৫ঃ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন 

আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নাম্বার সেটাপ করার পর আপনি সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছেন- এই মর্মে আপনাকে একটি এসএমএস কনফার্মেশন বার্তা পাঠানো হবে। আপনি এখন আপনার বিকাশ একাউন্ট এর মাধ্যমে সকল পরিষেবা পরিচালনা করতে পারবেন এবং বিকাশের বিভিন্ন সুবিধা এবং পরিষেবা গুলো অনুসন্ধান করতে পারবেন। আপনার বিকাশ ব্যবহার অভিজ্ঞতা সর্বাধিক করার জন্য কার্যকারিতার সাথে নিজেকে পরিচালিত করতে কিছু সময় অপচয় করতে পারেন। 

ধাপ ৬ঃ আপনার বিকাশ একাউন্টে তহবিল যোগ করুন 

আপনার বিকাশ একাউন্টের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য আপনাকে একটি তহবিল যোগ করতে বলা হবে। ব্যাংক স্থানান্তর এজেন্ট নেটওয়ার্ক, এমনকি অন্যদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ সহ আপনার একাউন্টে অর্থ যোগ করার জন্য একাধিক পদ্ধতি চালু রয়েছে। আপনার প্রয়োজনে সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি আপনাকে বেছে নিতে হবে এবং লেনদেন সম্পূর্ণ করতে অ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে। 

ধাপ ৭ বিকাশ পরিষেবা ব্যবহার শুরু করুন 

অবশেষে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আপনি খুব সুন্দর ভাবে আপনার নিজের জন্য একটি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পেরেছেন। এখন থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনে মোবাইল আর্থিক লেনদেন এর সকল সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন, বন্ধু বান্ধব আত্মীয়-স্বজন পরিবারবর্গকে অর্থ পাঠানো, পণ্য ও পরিষেবা পাওয়ার জন্য অর্থ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল, অন্যান্য বিল পরিশোধ করা, অনলাইনে কেনাকাটা করা ইত্যাদি সুবিধা গুলো আপনি এখন আপনার বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে পারবেন।





বাটন মোবাইলে বিকাশ খুলবেন কিভাবে?

বাংলাদেশের শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামীণ মফঃস্বল এলাকা পর্যন্ত বিকাশ মোবাইল apps অত্যন্ত সু পরিচিত এবং মোবাইল লেনদেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি ইতিমধ্যে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু আপনার যদি একটি একাউন্ট না থেকে থাকে, তাহলে কিভাবে আপনি একটি একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। ইতিমধ্যে স্মার্ট ফোন দিয়ে কিভাবে বিকাশ একাউন্ট খোলা যায় সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আপনার যদি স্মার্টফোন বা এন্ড্রয়েড ফোন না থাকে, তাহলে কি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন না?  উত্তরে বলতে হয় স্মার্টফোন না থাকলেও আপনি অবশ্যই আপনার হাতে থাকা বাটন ফোন এর মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট আপনার জন্য খুলে দিতে পারেন। কিন্তু কিভাবে খুলবেন চলুন আলোচনা করা যাক-

 আপনার হাতে থাকা বাটন ফোন এর ডায়াল অপশনে চলে যান এবং সেখানে *২৪৭# লিখে ডায়াল করুন

 *২৪৭# ডায়াল করার পর যে নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চান সেই নাম্বারটি টাইপ করুন

 এরপর আপনার বিকাশ একাউন্টের জন্য ভোটার এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন হবে। ভোটার এনআইডি কার্ডের নাম্বারটি নির্ভুলভাবে টাইপ করুন এবং পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করুন

 এরপর আপনাকে বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার বিকাশ একাউন্টের জন্য ৫ ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড সেটাপ করতে বলবে, আপনি সেটি সেটাপ করবেন এবং এই পাসওয়ার্ডটি আপনার গোপন পিন কোড পাসওয়ার্ড। মনে রাখবেন, এই গোপন পিন কোড(পাসওয়ার্ড) প্রতিটি লেনদেন সম্পূর্ণ করার সময় আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।

পাসওয়ার্ড সেটআপের পর আপনাকে ৭২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে, এরপর আপনার বিকাশ একাউন্টে আপনি আপনার যাবতীয় লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বাটন ফোন এর মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলতে সমস্যা হলে আপনি আপনার এনআইডি কার্ড ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ আপনার নিকটস্থ বিকাশ বিকাশ এজেন্ট অফিসে গিয়ে আপনার বিকাশ একাউন্ট টি খুলে নিতে পারেন। 
 

শেষ কথা

আর্থিক লেনদেন সহজ করতে বাংলাদেশ বিকাশ একাউন্ট প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত সহজ ও পছন্দের একটি মাধ্যম। এই মাধ্যমে আপনি অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে আর্থিক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। এর বহুমুখী সুবিধা শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোপরি দেশের বৃহৎ network এর মাধ্যমে মোবাইল আর্থিক লেনদেন পরিষেবা বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আশা করছি এই আর্টিকেলে আলোচনাকৃত ধাপে ধাপে নির্দেশিকা গুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার নিজের জন্য বিকাশ একাউন্টটি খুলতে পেরেছেন এবং বিকাশ পরিষেবার অধিভুক্ত হতে পেরেছেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন