ভুমিকা
বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইতিহাসে শুরুতে হাতের লেখা পাশপোর্ট দিয়েই ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হত। এই হাতের লেখা পাশপোর্ট এর কিছু সমস্যার কারনে সেটিকে বাতিল করা হয় এবং প্রবর্তন করা হয় মেশিন রিডেবল পাশপোর্ট বা MRP পাশপোর্ট ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে MRP পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে সংস্কার ও উন্নত করে প্রবর্তিত হয়েছে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা।
ই পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট হল এমন এক ধরনের বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ব্যবস্থা, যাতে এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ বসানো হয়। এই চিপের মধ্যে পাসপোর্ট কারীর ছবি, আঙ্গুলের ছাপ এবং আরো কিছু ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। অর্থাৎ ই পাসপোর্ট হলো একটি অত্যাধুনিক পাসপোর্ট ব্যবস্থা। এই পাসপোর্টকে ডিজিটাল পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট বলা হয়। পৃথিবীর ১১৯ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু করেছে। নতুন ভাবে কেউ পাসপোর্ট করতে চাইলে কিংবা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে তাকে এখন ই পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এই ই পাসপোর্ট এর মেয়াদ হবে দুই রকমের ৫ বছর ও ১০ বছর।
ই পাসপোর্ট দেখতে কেমন?
গতানুগতিক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট MRP(Machine Readable Passport) এর মতই দেখতে এই পাসপোর্ট। তবে অনেকগুলো পাতার সাথে থাকবে অতিরিক্ত দুটি পলিমারের পাতা, যা ব্যক্তির পরিচয় সংবলিত দুটি পাতায় মাইক্রো প্রসেসর চিপ ব্যবহার করা হবে। এই চিপের ভিতর থাকবে এর বাহকের সকল ধরনের তথ্য।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কিভাবে করবো?
ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য প্রথমে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার জেলায় এই ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদান করা হয় কিনা। এটি জানার পর আপনাকে ই পাসপোর্ট ফরম পূরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আপনি অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য এই লিংকে ভিজিট করতে পারেন। ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করতে আপনাকে ৫টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
প্রথম ধাপঃ ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদনের জন্য আপনাকে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইট পোর্টাল www.epassport.gov.bd -এ প্রবেশ করে ‘Apply Online for e‑Passport /Re‑Issue’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ Apply Online for e‑Passport / Re‑Issue -এ ক্লিক করার পর আপনার সামনে একটি পেইজ ওপেন হবে। এই পেইজ এ আপনার নিজের জেলা ও পুলিশ স্টেশন এর নাম সিলেক্ট করতে হবে। এরপর ‘Continue’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ তৃতীয় ধাপে আপনাকে ইমেইল আইডি দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে নিতে হবে। এজন্য password , repeat password[ পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ৬ ক্যারেক্টার হতে হবে]। তারপর আপনার
ভোটার এনআইডি কার্ডে যে নামটি আছে সেই নাম, পদবী, কান্ট্রি কোড, মোবাইল নাম্বার দিয়ে Continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ চতুর্থ ধাপে আপনার ইমেইল আইডির ইনবক্সে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। সেখানে ক্লিক করে আবার এই ওয়েবসাইটে ফিরে আসতে হবে এবং বাকি যে কাজগুলো সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য আপনাকে ‘Check Email’ অপশনে ক্লিক করে আপনার ই-পাসপোর্ট একাউন্ট এক্টিভেট করে নিতে হবে। এজন্য আপনাকে সাইন ইন বাটনে ক্লিক করে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করতে হবে। সাইন ইন সম্পূর্ণ হলে আপনার সামনে একটি পেইজ ওপেন হবে, এখানে Apply for a new e-passport নামে একটি বক্স দেখা যাবে। সেই বক্সে ক্লিক করে আপনি আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবেন।
এই সমস্ত ধাপ অতিক্রম করার পর আপনাকে আবেদন ফরম আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। এতক্ষণ আমরা যেটি আলোচনা করলাম সেটি হল আপনার আবেদন প্রক্রিয়া কিভাবে শুরু করবেন সেই বিষয়ে। উপরে উল্লেখিত ধাপগুলো পার হওয়ার পর আপনি আবেদন ফরম পূরণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্ত ধাপ গুলা অনুসরণ করতে হবে সেগুলোর সারমর্ম হলঃ
১. আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয় কিনা এটা নিয়ে খোঁজ করুন এবং আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন
২. আপনার ই-পাসপোর্ট এর জন্য অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন
৩. ই-পাসপোর্ট এর জন্য পাসপোর্ট ফি আপনাকে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে
৪. ই পাসপোর্ট এর জন্য আপনার নেটওয়ার্ক নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সকল সমস্ত কাগজপত্র সাথে নিতে হবে
৫. পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার ই পাসপোর্টটি সংগ্রহ করবেন, এই জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে সরবরাহ করা ডেলিভারি স্লিপ সাথে আনতে হবে। আপনি যদি নিজে যেতে না পারেন তাহলে অনুমোদিত কোন ব্যক্তিকে আপনার এনআইডি কার্ড সহ পাঠালেই পাসপোর্ট অফিস আপনার পাসপোর্টটি সরবরাহ করবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের প্রবর্তন বাড়তি নিরাপত্তা এবং সুবিন্যস্ত ভ্রমণ প্রক্রিয়ার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই আর্টিকেলে প্রদত্ত ধাপে ধাপে নির্দেশিকা অনুসরণ করে, আপনি দ্রুত আপনার ই-পাসপোর্ট পেতে পারেন এবং এটি অফার করে এমন অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।