এডিস মশা দেখতে কেমন হয়?

ভুমিকা

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ে সংক্রমিত হয়। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় বেশি কামড়ায়, তবে এ মশা রাতের বেলাতেও কামড়াতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক ধরনের জ্বর, যার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আপনি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। এই প্রবন্ধে আমরা ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো বিস্তারিত আলোচনা করব, যেখান থেকে ডেঙ্গু জ্বরকে প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা এডিস মশা কি এবং চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

 

এডিস মশা দেখতে কেমন হয়?

 সাধারণত এডিস মশা অন্যান্য মশার চাইতে দেখতে কালো হয়। এর পায়ের দিকে এবং সারা শরীরে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। এডিস মশা চেনার আর একটি বড় উপায় হল, এর মাথার পেছনে উপরের দিকে কাস্তের মতো সাদা দাগ থাকে, যা অন্য মশার ক্ষেত্রে মাঝ বরাবর সাদা দাগ থাকে। 

 এছাড়া এডিস মশা দিনের দিকে বেশি কামড়ায়, বিশেষ করে সূর্য উঠার তিন/ চার ঘন্টা পর এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বেশি সক্রিয় থাকে এই মশা। তবে প্রাণিবিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে- কেবল দিনের বেলায় নয়; এডিস মশা সক্রিয় থাকে উজ্জ্বল আলোতে। সুতরাং রাতের বেলা উজ্জ্বল আলো যেখানে থাকবে, সেখানে এডিস মশা সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই শুধু দিনের বেলা নয়, রাতের বেলাতেও কামড়াতে পারে এই মশা। অফিস, শপিং মল, ইনডোর অডিটোরিয়াম, খেলাধুলার স্টেডিয়াম ইত্যাদি স্থানে, যেখানে উজ্জ্বল কৃত্রিম আলো ব্যবহৃত হয় এবং প্রাকৃতিক আলোক রশ্মি যেখানে প্রবেশ করতে পারে না, এই সকল স্থানে ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। কয়েক প্রজাতির এডিস স্ত্রী মশা, ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যতম বাহক। এদের মধ্যে ইজিপ্টি স্ত্রী মশা( মশকী) প্রধান। অন্য মশাদের তুলনায় আকারে এডিস ইজিপ্টি স্ত্রী মশা একটু ছোট হয়। কোন ব্যক্তিকে কামড়ানোর তিন/চার দিন পর ডিম পাড়ে এই  এডিস ইজিপ্টি স্ত্রী মশা এবং সাত থেকে আট দিনের মধ্যে এডিস ডেঙ্গুর লার্ভা পূর্ণাঙ্গ মশার আকার ধারণ করে। একটি বয়স্ক এডিস মশা প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।


DEN-1, DEN-2, DEN-3, এবং DEN-4 এগুলো হলো ডেঙ্গুর ভাইরাস। এগুলোকে একত্রে বলা হয় সেরোটাইপ এবং এই সেরোটাইপ গুলো পৃথক পৃথকভাবে এন্টিবডিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ কারণেই একজন ব্যক্তি, এই সেরোটাইপের মাধ্যমে পৃথক পৃথক ভাবে চারবার পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসের ৫টি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এই ৫টি সেরোটাইপের যেকোনো একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ হলে; সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।


  ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত এডিস মশা কামড়ানোর তিন থেকে পনের দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা যায়। এই উপসর্গ বা লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে বমি, জ্বর, মাথা ব্যথা, পেশীতে ও শরীরের গাঁটে ব্যথা, শরীরের চর্মে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি/চুলকানি ইত্যাদি। এবার চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে।


 ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ

 ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ভাইরাস সংক্রমনের তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে বিভিন্ন উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়। এই উপসর্গ গুলোর মধ্যে রয়েছে-


  •  উচ্চ জ্বর ( ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি)
  •  চোখের পিছনে ব্যথা
  •  মাথাব্যথা
  •  বমি ও বমি বমি ভাব
  •  শরীরের গাঁটে ও মাংস পেশিতে ব্যথা
  •  শরীরের ত্বকে ‍র‍্যাশ বা চুলকানি


 ডেঙ্গু  জ্বরের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

 ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তারপরও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে; যাতে করে একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। এই জন্য-


 পানি শূন্যতা রোধ- রোগী যদি ডেঙ্গু জ্বরে  আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে পানি শূন্যতা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়; সেই ক্ষেত্রে খাওয়ার স্যালাইন, পানি, ফলের রস, ডাবের রস, তরল খাবার ইত্যাদি পান ও খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।


 জ্বর নিয়ন্ত্রণ- জ্বর ১০৪/১০৫  কিংবা এরও বেশি হলে প্যারাসিটামল আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।


 রক্ত ক্ষরণ রোধ- ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই যেকোনো ধরনের রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ  করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


 ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা

 ডেঙ্গুজ্বর মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-

 DSS বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম- ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা  DSS হলো, ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা; যেখানে রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যায়। এটি হলে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো হল-

  •  দ্রুত হৃদস্পন্দন
  •  ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
  •  শ্বাসকষ্ট হওয়া
  •   শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি

DHF বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার- ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা DHF হলো, ডেঙ্গু জ্বরের একটি আর একটি মারাত্মক জটিলতা। এই জটিলতা দেখা দিলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। ফলে দেখা দিতে পারে-

  • নাক থেকে রক্ত পড়া
  • দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত 
  • ত্বকে রক্তপাত
  • অন্ত্র থেকে রক্তপাত 

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা

 ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল, এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষা করা। এই জন্য এডিস মশা যেখানে জন্মগ্রহণ করে এবং বসবাস করে সেই সমস্ত স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দিনের বেলায় ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে; এছাড়া বাইরে বের হলে পূর্ণ হাতা পোশাক বা মশা তাড়ানোর ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।


 মশা নিধনের ব্যবস্থা

এডিস মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বংশ বিস্তার রোধের জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সেগুলো হলো-
  • বাড়ির আশেপাশের জলাশয় শুকিয়ে ফেলতে হবে
  • ডাবের খোসা, ফুলের টব, বালতি, গাড়ির টায়ার ও যেখানে পানি জমা হয়ে থাকে; সেই সফল জায়গায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না
  • মশা ডিম পাড়ার সম্ভাব্য স্থানগুলো ডিম পাড়ার জন্য অনুপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে


 উপসংহার

 ডেঙ্গু জ্বর একটি গুরুতর মারাত্মক রোগ হতে পারে; তাই এই লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এর যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে, যাতে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আগেই রোগী সুস্থ হতে হয়ে উঠতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন