শীতকালে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ ও লক্ষণসমূহ

আমাদের বাংলাদেশে শীতকালে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর খেজুরের রস পাওয়া যায়। এদেশে ঐতিহ্যগতভাবে খেজুরের রস পান অত্যান্ত জনপ্রিয়। আপনি জানেন কি কাঁচা খেজুর রস পান করা আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই কাঁচা খেজুর রস পানের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এক জরিপে দেখা গেছে গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ৩২৬ জন মানুষের শরীরে নিপাহ ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার প্রায় ৭১% । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাংলাদেশে আর কোন ভাইরাসের সংক্রমণে এত লোক মারা যায়নি।

শীতকালে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ ও লক্ষণসমূহ 

লক্ষণসমূহ-নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে প্রধান হল জ্বর সহ মাথা ব্যথা, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, খিচুনি হওয়া। এই উপসর্গগুলো শীতকালে কোন রোগীর শরীরে দেখা যাওয়া মাত্র নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে প্রেরনের পরামর্শ দিতে হবে। মনে রাখা জরুরী খেজুরের রস পান না করেও এ ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

  • খেজুরের কাঁচা রস পান করা যাবে না। একান্তই রস পান করার প্রয়োজন হলে ভালো করে ফুটিয়ে পান করতে হবে। ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেজুর রস ফুটানো হলে নিপাহ ভাইরাস মরে নষ্ট হয়ে যায়
  • কোন ধরনের আংশিক খাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
  • ফলমূল খাওয়ার আগে ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিয়ে খেতে হবে
  • আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার পর ভালো করে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে
  • নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে

নিপাহ ভাইরাস কি?- নিপাহ ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয় মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে এবং বাংলাদেশে ২০০১ সালে এ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটে। এরপর ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এর জীবাণু পরীক্ষা করে নিপাহ ভাইরাস হিসেবে সনাক্ত করা হয়। সাধারণত বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস শীতকালে সংক্রমিত হয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই কয়েক মাস এ ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। বাদুড় যেহেতু নিশাচর প্রাণী, রাতের বেলা বাদুড় মানুষের মতো খেজুরের রস পান করার জন্য খেজুর গাছে যায়। নিপাহ ভাইরাস বাদুড়ের শরীর ধারণ করে অর্থাৎ যেহেতু বাদুড়ের শরীর নিপাহ ভাইরাসের বাহক, সেহেতু বাদুড়ের লালা রাতের বেলা খেজুরের রসের সাথে মিশে খেজুর রসকে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমণ করতে পারে, আর এই রস পান করলে মানুষের শরীরে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩২ টি জেলায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত জেলা হল ফরিদপুর এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমিত জেলা হলো লালমনিরহাট। ফরিদপুর জেলায় ২০০৪ ও ২০১১ সালে দুই দুইবার নিপাহ ভাইরাসের মহামারী দেখা দেয়। দেশের চিকিৎসকরা প্রত্যক্ষ করেছেন যেসব এলাকায় খেজুরের গাছ বেশি রয়েছে সেই সমস্ত এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমনের হার বেশি।

শেষের কথা- চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন নিপাহ ভাইরাস কভিড ১৯ করোনাভাইরাসের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়। এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মধ্যেই রোগ লক্ষণ দেখা যায়। এ ভাইরাসের কোন টিকা বা প্রতিশোধক নেই। কাজেই প্রতিরোধই হলো একমাত্র উপায়। বিগত দিনগুলোতে যে সমস্ত রোগী নিপাহ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাদের প্রায় সব ব্যক্তি কোন না কোন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তাদের কারো কারো নড়াচড়া করতে অসুবিধা, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার সমস্যা, স্মৃতিশক্তির ক্ষীণতা, সম্পূর্ণ বা আংশিক পক্ষাঘাত এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে জীবন যাপন করছেন। এছাড়া অনেকের দৃষ্টিশক্তি ও আগের তুলনায় কমে এসেছে। সুতরাং এই প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই জনসচেতনতার বিকল্প নেই। দেশের সর্বসাধারণকে সচেতন ও এর ভয়াবহ দিকটা সম্পর্কে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

আরোও জানতে- টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন