ফুলকপির উপকারিতা ও এর বিভিন্ন জাত

 ভূমিকা

বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি হলো ফুলকপি। এটি বোটানিকালি ব্রাসিকা ওলারিয়েস পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি একটি পুষ্প বিশিষ্ট শীতকালীন সবজি যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শীতকালেই চাষ করা হয়। এই সবজি বাঙ্গালীদের প্রিয় একটি সবজি এবং স্বাস্থ্যকর পুষ্টিগুণে ভরপুর। ফুলকপিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। এই আর্টিকেলে সবজি হিসেবে ফুলকপির উপকারিতা এবং বিভিন্ন জাতের নাম সম্পর্কে আলোচনা করব।

ফুলকপির বিভিন্ন জাত

ফুলকপির বৈজ্ঞানিক নাম "Brassica Oleracea var. botrytis" এবং ইংরেজিতে এটিকে "Cauliflower" বলা হয়। এটি ব্রাসিকা ওলারেসিয়া পরিবারের একটি সদস্য। এই জাতের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে ক্যাবেজ, ব্রাসলসপ্রাউটস, কলারাবি এবং গ্রীণকলি রয়েছে।



ফুলকপির বিভিন্ন জাত এবং উপজাত রয়েছে ,ফলে এর আকার ও রং এর ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত ফুলকপি সাদা বা সাদা সবুজ রঙের হয়ে থাকে, তবে এটি সহজেই চিনতে পারা যায় এর উজ্জ্বল সাদা বা সাদা সবুজ গোঁফটির কারণে। ফুলকপি সাধারনত ঠান্ডা ও আদ্র জলবায়ুতে ভালো ফলন হয়ে থাকে। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সহ পলি মাটিতে ফুলকপি ভালো হয়।

আগাম ফুলকপির জাত

আমাদের দেশে চাষকৃত ফুলকপি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংকর জাতের এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলকপি। আগাম চাষ করা যায় এই ধরনের ফুলকপির মধ্যে যেগুলো অন্যতম সেগুলো হল-

  • অগ্রহায়ণী
  • আর্লি পার্টনা
  • সুপার স্নোবল
  • ট্রপিক্যাল স্নো
  • সামার ডায়মন্ড এফ১
  • হোয়াইট বিউটি
  • ম্যাজিক স্নো এফ১
  • কে এস ৬০
  • হিট মাস্টার
  • ক্যামেলিয়া
  • আর্লি বোনাস
  • স্পেশাল ৪৫
  • স্নো কুইন এফ ১ ইত্যাদি

এই আগাম জাতের ফুলকপির বীজ শ্রাবণ ভাদ্র মাসে বপন করা হলে কৃষক বেশি লাভবান হতে পারেন।


মৌসুমী ফুলকপির জাত

মৌসুমী জাতের ফুলকপির মধ্যে যেগুলো অন্যতম সেগুলো হল-

  • বারি ফুলকপি ১
  • চন্দ্রমুখি
  • পৌষালী
  • চম্পাবতী
  • হোয়াইট টপ
  • স্নোবল এক্স
  • স্নোবল ওয়াই
  • মোনালিসা এফ১
  • চন্দ্রিমা ৬০
  • ম্যাজিক ৭০
  • হোয়াইট ফ্যাশ
  • হোয়াইট কনটেসা ইত্যাদি

  • এসব জাতির কবি ভাদ্র আশ্বিন মাসে বপন করতে হয়।

নাবি জাতের ফুলকপি

নাবি জাতের ফুলকপি গুলোর মধ্যে যেগুলো অন্যতম হলো-

  • ইউনিক স্নোবল
  • ক্রিস্টমাস
  • হোয়াইট মাউন্টেন
  • হাইব্রিড ইত্যাদি
এসব জাতির বীজ বোনার অপযুক্ত সময় হলো আশ্বিন ও কার্তিক মাস।


ফুলকপির উপকারিতা

ফুলকপি শুধুমাত্র আপনার খাদ্য তালিকায় একটি সুস্বাদু মেন্যু সংযোজন নয় বরং এটি আপনার অগণিত স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি মূল্যবান অবলম্বন। এই পর্যায়ে আমরা ফুলকপির স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল্যবান কতিপয় গুণাবলী সম্পর্কে জেনে নেব।

ফুলকপি পুষ্টির পাওয়ার হাউস
ফুলকপিতে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি সহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি শক্তিশালী পাওয়ার হাউজ, যেখানে আপনি সহজে পেয়ে যাবেন রাসায়নিক উপাদান ফোলেট,পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান। এই মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান গুলো আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আনায়ন করবে,হজমের সহায়তা করবে এবং সর্বোপরি এটি আপনার শরীরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ
ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী সালফোরাফেন এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষকদের মতে- সালফোরাফেন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমাতে
শরীরের ওজন কমাতে ফুলকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ না করে আপনি আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এছাড়া ফুলকপি কোলিনের একটি চমৎকার উৎস হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ প্রতিরোধ
দীর্ঘস্থায়ী রোগের মূল কারণ হলো দীর্ঘস্থায়ী প্রবাহ। ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের প্রদাহের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাজেই নিয়মিত ফুলকপি খেলে আপনার দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমে যেতে পারে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি
শরীরের অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য ফুলকপির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ফুলকপি তে থাকা ফাইবার উপাদান খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং পানির উপাদান নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

উপসংহার
উপসংহার ফুলকপি শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছর ধরে এই সবজি পাওয়া যায়। তবে শীতকালেই এর চাষ বেশি হয়। এই সবজিতে থাকা খাদ্য উপাদান গুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শুধুমাত্র এই সবজি সারা বছর ধরে যাতে উৎপাদন করা যায় সেই জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যাতে করে জটিল এবং কঠিন রোগ গুলোকে প্রতিরোধ করে একটি সুস্থ সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা যায় সেদিকে দেশের সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন