বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই শত কোটি এর বেশি ব্যবহারকারী youtube এর সাথে প্রতিমাসে সংযুক্ত থাকে। মূলত ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বর্তমানে ইউটিউব ওয়েবসাইটটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ভিডিও আপলোড এবং তা শেয়ারিং করা এই প্ল্যাটফর্ম এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ইউটিউব বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক টিউটোরিয়াল, লেকচার এবং ডকুমেন্টারি প্রচার করে, যা এর ব্যবহার কারীদের কাছে এটি দিনে দিনে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামগ্রিকভাবে youtube একটি শক্তিশালী সাইট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে ব্র্যান্ডের প্রচার এবং একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ তৈরি করেছে। আজকের এই আর্টিকেলে ইউটিউব কি, এর প্রতিষ্ঠাতা, ইউটিউবের প্রথম ভিডিও, youtube এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ইউটিউব থেকে অর্থ আয় এর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করছি প্রিয় পাঠক আপনি আমাদের সাথেই থাকবেন।
Youtube কি?Youtube হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইট, যা ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট বা অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর সদর দপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ব্রুনোতে।
Youtube কি ধরনের ওয়েবসাইট?
ইন্টারনেটে আমরা সাধারণত দুই ধরনের সার্চ ইঞ্জিন দেখতে পাই। এক, গুগল সার্চ ইঞ্জিন (Google search engine) এবং দুই, ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন (YouTube search engine)। গুগল সার্চ ইঞ্জিন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যেকোনো ধরনের বিষয়, তথ্য, প্রশ্ন সার্চ দিলেই সেই সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আমাদের নিকট টেক্সট আকারে উপস্থাপন করে, এবং সেখান থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য বা প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে থাকি। এইটা মূলত ব্লগার সাইটের সহযোগিতায় আমাদের নিকট তথ্য সরবরাহ করে এবং সেই তথ্য আমরা সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু যখন আমাদের কোন এক্সপার্ট কোনো তথ্য বা প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান কোন ভিডিও এর মাধ্যমে আমাদের নিকট উপস্থাপন করে এবং সেগুলোকে আমরা ইন্টারনেট সার্চের মাধ্যমে পেয়ে থাকি তখন সেটা হচ্ছে youtube সার্চ ইঞ্জিন এর কল্যাণে ঘটে থাকে। সুতরাং আমরা বলতে পারি ইউটিউব হল একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট বা অ্যাপস যেখানে অসংখ্য ভিডিও আপলোড করা হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য এর ব্যবহারকারীদের নিকট শেয়ার করা হয়।
ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা ও সর্ব প্রথম ভিডিও এর নাম
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত Youtube এ কোটি কোটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন সর্বপ্রথম কে এই ভিডিও আপলোড করেন? আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন, একজন বাংলাদেশী ও জার্মান বংশোদ্ভুত ব্যক্তি ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। অবাক হচ্ছেন তো! অবাক হলেও এটাই সত্য। জার্মান বংশোদ্ভুত বাংলাদেশী সেই ব্যক্তির নাম জাওয়েদ করিম যার মা (জাওয়েদ করিম এর মায়ের নাম Christine/ক্রিস্টিন) ছিলেন একজন জার্মানি নাগরিক, বাবা নাঈমুল করিম (Naimul Karim/নাইমুল করিম) ছিলেন বাংলাদেশী। তার প্রথম আপলোড করা ভিডিও এর নাম ‘ মি এট দা জু”। ২০০৫ সালে ২৩ এপ্রিল তিনি এই ভিডিও আপলোড করেন যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৮ সেকেন্ড। ইউটিউব মূলত স্টিভ চেন, চ্যাড হার্লি এবং জাওয়েদ করিম(জাওয়েদ করিমকে অনেকেই জাভেদ করিম বলে থাকেন-Chad Hurley, Steve Chen, and Jawed Karim)এই তিন ব্যক্তি যৌথভাবে ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন। তারা তিনজনেই পেপাল (অনলাইন মানি ট্রান্সফার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কাজেই স্বভাবতই ইউটিউব এর প্রতিষ্ঠাতা একক ভাবে কেউ নন, বরং একজন বাংলাদেশী ও জার্মান বংশোদ্ভূত ব্যক্তিসহ মোট তিনজন ব্যক্তি।
Youtube এর মালিক কে?
ইউটিউবের ব্যবহারকারীরা ভিডিও তৈরি ও সেটি আপলোডের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করতে পারেন যার মাধ্যমে অপরকে বিনোদন, বিভিন্ন তথ্য ও শিক্ষামূলক জ্ঞান বিতরণ করতে পারেন। একদিকে এর ব্যবহারকারীরা অন্যদের নিকট বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করতে পারেন, অন্যদিকে দর্শক শ্রেনীর ব্যক্তিগণ ব্যবহারকারীর তথা সকল দর্শকদের সাথে শেয়ার করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। কাজেই ইউটিউব প্লাটফর্ম একটি অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম বটে। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ইউটিউবের মালিক কে? প্রথম দিকে এই প্লাটফর্মের মালিক ছিলেন বাংলাদেশ ও জার্মান বংশোদ্ভূত জার্মান প্রবাসী জাওয়েদ করিম সহ স্টিভ চেন, চ্যাড হার্লি নামের আরো দুজন ব্যক্তি, যারা পেপাল প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন। কিন্তু ২০০৬ সালে তারা এই প্লাটফর্মকে গুগল এর নিকট বিক্রয় করে দেন। সেই সূত্র ইউটিউবে বর্তমান মালিক গুগল।
বাংলাদেশে Youtube কত সালে চালু হয়?
ইউটিউবের জন্ম ২০০৫ সালে হলেও এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একজন বাংলাদেশের ব্যক্তি হলেও বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর এই পরিষেবাটি চালু হয়। তখন শুধুমাত্র ইউটিউব এবং গুগল প্লে মিউজিকের ভিডিওগুলো পাওয়া যেত যেখানে কোন বিজ্ঞাপন এর ব্যবস্থা ছিল না।
Youtube থেকে আয়
ইউটিউব থেকে আয় করা যায় বিষয়টি শুনে আপনি হয়তো অবাক হতে পারেন। কিন্তু অবাক হলেও এটি সত্য যে এই ইউটিউব সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মের মাধ্যমে আপনি অর্থ আয় করতে পারবেন। কিভাবে অর্থ আয় করা যায়, সেই বিষয়ে চলুন এবার জেনে নিন।
Youtube এ আয়ের শর্তাবলী
Youtube কিভাবে অর্থ প্রদান করে
আপনি ইউটিউবে একটি চ্যানেল ক্রিয়েট করলেন এবং সেখানে ভিডিও তৈরি করে আপলোড করলেন আর সাথে সাথে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আপনাকে অর্থ প্রদান করা শুরু করবে এরকম কিন্তু নয়। এই প্লাটফর্ম থেকে অর্থ আয় করতে হলে আপনাকে আরো কিছু ধাপ পার হতে হবে। এর মানে হল আপনি ভিডিও আপলোড করার পর সেই ভিডিও কি পরিমান ভিউ আসছে অর্থাৎ দর্শক আপনার ভিডিওটি কি পরিমান এবং কতবার দেখছে এই বিষয়টি। আবার ভিডিওটি শুধুমাত্র দর্শকরা দেখলেই হবে না সেটাতে বিজ্ঞাপন কিভাবে দেখানো হচ্ছে সেই বিষয়টি অন্তর্নিহিত থাকে। তাই অর্থ ইনকামের অন্যতম শর্ত হলো ভিডিওটিতে ভিউ জেনারেট হওয়া। আবার ভিউ এর অর্থ হল বিজ্ঞাপনের ভিউ। এর মানে হলো আমি প্রতি বিজ্ঞাপন দেখলে কত টাকা আয় করতে পারি এই বিষয়টি। ইউটিউব প্রতি ভিউ এবং বিজ্ঞাপন ভিউ বা adview এক নয়। ভিডিও ভিউ হল আপনার সেই ভিডিওটি দেখার সংখ্যা বা পরিমাণ এবং বিজ্ঞাপন ভিউ বা অ্যাড ভিউ হল আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপনের ভিউয়ের সংখ্যা বা পরিমাণ
প্রতি ভিউ এ কত টাকা ইনকাম হয়?
আপনার Youtube চ্যানেলের ভিডিও ভিউ থেকে আপনার কত টাকা আয় আসতে পারে সেটি মূলত নির্ভর করে আপনার ভিডিও কনটেন্ট এর উপর। তবে এরকমও হয়েছে যে, ইউটিউব চ্যানেল ভিডিও প্রতি ১০০০ ভিউ এর উপর এক ডলার বা একশত টাকা থেকে ২৫ ডলার বা ২৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হওয়া সম্ভব। ইউটিউবের সূত্র বলছে ফাইনান্স এবং টেকনোলজি সম্পর্কিত ভিডিও নির্মাণে ইউটিউব চ্যানেল থেকে অন্যদের চাইতে বেশি অর্থ আয় করা যায়, কারণ এইখানে এই বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বেশি থাকে।
ভিডিও ভিউ দ্বারা ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়
প্রতি ১০k বা ১০ হাজার ভিডিও ভিউ এ $৫০ থেকে $৭০ ডলার
প্রতি ১০০k বা ১ লক্ষ ভিডিও ভিউ এ $৫০০ থেকে $৭০০ ডলার
প্রতি ৫০০k বা ৫ লক্ষ ভিডিও ভিউ এ $২,৫০০ থেকে $৩,৫০০ ডলার
প্রতি মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ ভিডিও ভিউ এ $৫,০০০ থেকে $৭,০০০ ডলার
ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের আরো কিছু উৎস
আপনি যে শুধুমাত্র ভিডিও ক্রিয়েট করে তা ইউটিউবে আপলোড করে অর্থ ইনকাম করতে পারবেন এরকম কিন্তু নয়। ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের আরো কিছু উৎস রয়েছে। এগুলো উৎস থেকেও আপনি অর্থ ইনকাম আয় করতে পারেন। যেমন এফিলিয়েট লিংক শেয়ার, স্পন্সর পোস্ট, অংশীদারিত্ব, তৃতীয় পক্ষের অ্যাপস ব্যবহার, পণ্যদ্রব্যে বা পরিষেবা বিক্রয়, সুপার চ্যাট ও লাইভ স্ট্রিমিং ইত্যাদি উৎস থেকেও ইউটিউবে আপনি উপার্জন করতে পারেন।