ভূমিকা
বাংলাদেশের বড় রাস্তার পাশে কোলাহলপূর্ণ প্রাণবন্ত এলাকার কোন স্থানে ছোট ছোট স্টল কিংবা খোলা মাঠে পণ্য সামগ্রী ও সেবা ক্রয়- বিক্রয়ের স্থান হল গ্রামীণ হাট বাজার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই হাট বাজার একসময় বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করতো। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এটির পরিসর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে হাট ও বাজারের মাধ্যমে প্রধানত খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে। দেশের গ্রামীণ এলাকার এই হাট বাজার থেকে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করা হয় এবং সেটি শহর থেকে শহরে এবং অনেক সময় বিদেশেও পৌঁছানো হয়। এই কারণে গ্রামীণ হাট বাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুদূর অতীত থেকে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই হাট বাজার সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
গ্রামীণ হাট ও বাজার কি
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে মানুষ তাদের নিজেদের ব্যবহার অতিরিক্ত পণ্য সামগ্রী ক্রয় ও বিক্রয় করে সেই স্থানকে হাট ও বাজার বলে। অর্থাৎ নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে বেচা কেনা করা হয় সেই স্থানকে হাট ও বাজার বলে। তবে হাট ও বাজারের মধ্যে পার্থক্য আছে-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হাট বাজার
বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে গ্রামীণ বাংলার হাট বাজার প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এই হাট বাজারগুলো গ্রামীণ বাংলার আবহমানকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই সকল হাট বাজারের নামকরণে আছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
পণ্য সামগ্রির নামকরণ অনুযায়ী দেশের হাট বাজার
হাট বাজার বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক। এই সকল হাট বাজার পণ্যের নাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে বিচিত্রতাও লক্ষ্য করা যায়। পণ্য সামগ্রীর নামকরণ অনুযায়ী অনেক হাটের নামকরণ করা হয়েছে। চলুন সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
ঐতিহ্যবাহী তাঁতের হাটতাঁতের কাপড় একসময় গ্রামীণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। দেশের পাবনা, টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁতের প্রচলন আবহমানকাল থেকে চলে এসেছে। এই সকল অঞ্চলের তাঁত শিল্পীরা তাঁতের শাড়ি, গামছা ও লুঙ্গি তৈরি করত। এই সকল তাঁতের কাপড় তারা বিভিন্ন হাটে বিক্রয় করত এবং তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। টাঙ্গাইলে করোটিয়া যা ২০০ বছরের পুরাতন এবং বাবুরহাট তাঁত শাড়ির জন্য অত্যান্ত পরিচিত লাভ করেছে যা আজও এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সিরাজগঞ্জ এবং পাবনার আতাইকুলা ও শাহজাদপুর হাটও তাঁতের কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। এই সকল হাট গুলোতে বিখ্যাত বেনারসি ও জামদানির শাড়িও পাওয়া যায়।
ঢাকা ডেমরার জামদানির হাটঢাকার মসলিন কাপড় পৃথিবী বিখ্যাত একটি সুতি শাড়ি। মশলিনের উত্তরাধিকার জামদানিতে তাঁতিদের দক্ষতা ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি মুঘল আমল থেকে ঢাকার ডেমরা জামদানির হাটটি অত্যন্ত পরিচিত ও বিখ্যাত একটি হাট। এই হাটটি প্রতি শুক্রবার বসে। এই হাটে দেশ বিদেশ থেকে ক্রেতা সাধারনের আগমন ঘাটে। বর্তমানে আগের চাইতে ক্রেতা সাধারণের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।