ভূমিকা
জ্ঞান অর্জনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তার মধ্যে আমরা সাধারণত দুইভাবে জ্ঞান অর্জন করি। এক. বই পড়াশুনা করে এবং দুই. ভ্রমণ করে। কিন্তু সব সময় সকলের পক্ষে ভ্রমণ করে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। এতে সময় এবং অর্থ দুটিই প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা যখন কোন বই কিংবা কোন উৎস থেকে পাঠ করে কিংবা শ্রবন করে জ্ঞান অর্জন করি, তখন সময় এবং অর্থ অনেক কম লাগে। কিন্তু এই বই বা তথ্যের উৎস যারা তৈরি করেন, তাদেরকে লেখক বা ক্রিয়েটর বলা হয়। বর্তমানে অফলাইনে লেখালেখির পাশাপাশি অনেকেই ইন্টারনেট বা অনলাইনে লিখে থাকেন। কিন্তু লেখালেখি করতে সবাই পারেন না। এটি করতে হলে অধ্যবসায় ও প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। আর এই লেখার কাজ যারা করে থাকেন, তাদেরকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা কনটেন্ট রাইটার বলা হয়। আজকের প্রবন্ধে কনটেন্ট রাইটিং কি, কন্টেন্ট রাইটিং কত রকমের হতে পারে, ফ্রিল্যান্সিং কন্টেন্ট রাইটিং কি, এবং কনটেন্ট রাইটার হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। আপনারা যারা কনটেন্ট রাইটার হওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য লেখাটি অনেক উপকারে আসবে।
কনটেন্ট কি
কনটেন্ট এর প্রকারভেদ
কনটেন্ট সাধারণত বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য এবং শ্রোতাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এ কারণে কনটেন্ট এর প্রকারভেদও ভিন্নতর হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই কনটেন্ট এর প্রকারভেদ সম্পর্কে-
মাধ্যম অনুসারে কনটেন্ট
টেক্সট বা লিখিত কনটেন্ট- যে সকল কন্টেন্টগুলো লিখিত আকারে হয়ে থাকে সেগুলোকে টেক্সট বা লিখিত কন্টেন্ট বলা হয়। এই কনটেন্ট এ শুধুমাত্র লেখা থাকতে পারে অথবা এর সাথে কোন ছবি যুক্ত থাকতে পারে। বই, নিবন্ধ, ব্লগ পোস্ট, সোসাইল মিডিয়া পোস্ট, আর্টিকেল, ওয়েবসাইট পেইজ, সংবাদপত্র ইত্যাদি টেক্সট বা লিখিত কনটেন্ট।
ভিডিও কনটেন্ট- ভিডিও ছবি গ্রাফ ইত্যাদি
শ্রবণ কনটেন্ট- পডকাস্ট, অডিও বুক, গান ইত্যাদি হলো শ্রবণ কনটেন্ট ইত্যাদি
ইন্টারেক্টিভ কনটেন্ট- ওয়েবসাইট, গেম, অ্যাপস ইত্যাদি ইন্টারেক্টিভ কনটেন্ট
উদ্দেশ্য অনুসারে কনটেন্ট
তথ্য মূলক কনটেন্ট- যেমন বই, নিবন্ধ, ওয়েবসাইট
প্রচারনামূলক কনটেন্ট- যেমন বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ব্রোশিওর ইত্যাদি। এই কনটেন্ট সাধারণত পণ্য বা পরিষেবা বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে
বিনোদনমূলক কনটেন্ট- যেমন গান, চলচ্চিত্র, ফিল্ম ইত্যাদি দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়
শিক্ষামূলক কনটেন্ট- যেমন জ্ঞান বা দক্ষতা শিখানোর জন্য তৈরি করা হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কোর্স, টিউটোরিয়াল শিক্ষামূলক কনটেন্ট
সামাজিক যোগাযোগ কনটেন্ট- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর জন্য যে সকল কনটেন্ট তৈরি করা হয় সেগুলো হচ্ছে সামাজিক কনটেন্ট। যেমন facebook, twitter, linkdin দিন ইত্যাদি মাধ্যমে যে সকল কনটেন্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে সামাজিক কনটেন্ট বলা হয়
কাস্টমার/ভোক্তা অনুযায়ী কনটেন্ট - সাধারণত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য যে সকল কনটেন্ট তৈরি করা হয় সেগুলো হচ্ছে ভোক্তা/কাস্টমার কনটেন্ট। ব্যবসা থেকে ব্যবসা/B2B, ব্যবসা থেকে কাস্টমার/B2C, কাস্টমার থেকে কাস্টমার/C2C ব্যবসায়ী ও কাস্টমারদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যে কনটেন্ট তৈরি করা হয় সেটি হলো ভোক্তা কনটেন্ট।
সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে আমরা কন্টেন্ট এর নিম্নলিখিত আধুনিক বিভাজন করতে পারি। সেগুলো হল-
১। টেক্সট কনটেন্ট
যেকোনো লেখা বই, প্যারাগ্রাফ, ব্লগ পোস্ট, নিউজ আর্টিকেল, ইবুক, স্ক্রিপ্ট, সাইট পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ইমেইল, ইত্যাদি
২। অডিও কনটেন্ট
পডকাস্ট, রেডিও প্রোগ্রাম, সংগীত, ইত্যাদি
৩। ভিডিও ও এনিমেশন কনটেন্ট
ভিডিও ক্লিপ, ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, টিভি শো, বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি
৪। সামাজিক মাধ্যম কনটেন্ট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন facebook, instagram , twitter ইত্যাদি মিডিয়ার জন্য যে কনটেন্ট তৈরি করা হয়
৫। গ্রাফিক্যাল কনটেন্ট
ছবি, চিত্র, ইলাস্ট্রেশন, কার্টুন, গ্রাফিক্স, ডিজাইন, পোস্টার, ব্যানার, ইত্যাদি
৬। ইন্টারঅ্যাক্টিভ কনটেন্ট
ওয়েবসাইট, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, গেম, সাম্প্রতিক টেকনোলজি, ইত্যাদি
৭। ইনফোগ্রাফিক
জটিল তথ্য সহজে বোঝার জন্য
৮। পডকাস্ট কনটেন্ট
আলোচনা, সাক্ষাৎকার, বা গল্প শেয়ার করার জন্য
কনটেন্ট রাইটিং কি
বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে Content writing বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। কারণ ইন্টারনেট জগতে বিচরণ করতে আপনাকে কোন একটি মাধ্যম, ওয়েবসাইট, অ্যাপস বা ওয়েব পেইজের সাহায্য নিতে হবে। আর কোন অ্যাপস বা ওয়েবসাইটের প্রধান উপাদান হলো কন্টেন্ট। কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইট, অ্যাপস বা ওয়েবপেজের সাহায্যে ওয়েবসাইটের প্রধান উপাদান কন্টেন্টকে এর ব্যবহারকারীদের নিকট সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
কনটেন্ট রাইটিং এর লক্ষ্য হলো- কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠকদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা দেওয়া এবং তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা।
এটি ব্যক্তিগত বা পেশাগত উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য হতে পারে, যেমন ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া, এবং ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য কনটেন্ট তৈরি করা। কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রদান করা, সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে লেখা, এবং পাঠকদের সাথে সাম্প্রদায়িক যোগাযোগ করা হলো কনটেন্ট রাইটিং এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একজন ভালো মানের কনটেন্ট রাইটার কন্টেন্টের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ভিজিটরদের সমস্ত প্রশ্নের সমাধান দিতে পারেন।
সুতরাং আমরা বলতে পারি- কনটেন্ট রাইটিং হল নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখার মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও এনিমেশন ব্যবহার করে অথবা না করে, কোন নির্দিষ্ট বিষয় এর তথ্য ও উপাত্তকে কোন মাধ্যম বা ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের নিকট খুব সহজ ভাবে উপস্থাপন করাকে কনটেন্ট রাইটিং বলে।
একজন ভাল কনটেন্ট রাইটার হওয়ার উপায় কি?
একজন কনটেন্ট রাইটার হতে হলে আপনাকে নিয়মিত ভাবে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখবেন কন্টেন্ট রাইটিং একটি মূল্যবান দক্ষতা, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি কনটেন্ট রাইটিং করে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন আপনি। কনটেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য পাশাপাশি সেগুলো বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন, ব্লগ সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদিতে শেয়ার করুন এবং তাদের নিকট থেকে মতামত নিন, এতে আপনার লেখার গুণগত মান সম্পর্কে একটি ধারণা জন্ম নেবে। একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নির্বাচিত কোনো বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, নিবন্ধন , বই পুস্তক, সংবাদপত্র ইত্যাদি পাঠ করতে হবে এবং সেখান থেকে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। কন্টেন্ট রাইটিং এর উপর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, কনটেন্ট রাইটিং টিউটোরিয়াল, কন্টেন্ট রাইটিং গাইডলাইন বই অনেক সাহায্য করতে পারে। একজন ভালো মানের কন্টেন্ট রাইটার হতে বিভিন্ন অনলাইন সরঞ্জাম গুলি যেমন Grammarly, Hemingway Editor চ্যাট জিপিটি বিভিন্ন টুলস এর ব্যবহার আপনার লেখাকে এবং লেখার মানকে আরো উন্নত করবে।
কনটেন্ট রাইটার হওয়ার যোগ্যতা
লেখার দক্ষতা- কনটেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য লেখার দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেখার দক্ষতা হল ভাষার সঠিকতা, সুন্দর ভাষার ব্যবহার এবং লেখা সম্পাদনা পড়ার দক্ষতা
বিষয় জ্ঞান- কনটেন্ট লেখার জন্য বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার লেখার বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে আপনার লেখার গুণগত মান উন্নত হবে না। এ কারণে বিষয় জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী
সময় জ্ঞান- কনটেন্ট রাইটারকে সময় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অনেক সময় একজন রাইটার কে একাধিক প্রকল্পের জন্য কাজ করতে হয়, সেই ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনার জরুরি হয়ে পড়ে। কাজেই সবাইকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য একজন কনটেন্ট রাইটারের সময় জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী
SEO জ্ঞান- অনলাইন কনটেন্ট রাইটার হওয়ার সময় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অর্থাৎ SEO জ্ঞান থাকতে হবে, নতুবা লেখার বিষয়বস্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না
প্রফেশনালিজম- কনটেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য পেশাগত দক্ষতা বা প্রফেশনালিজম এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ যথাযথ কার্য পালন এর মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা, সম্মান, সময়ের কাজ সময়ে সম্পূর্ণ করার দক্ষতা ইত্যাদি আপনাকে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করবে
এই যোগ্যতাগুলো থাকলেই সাধারণত একজন কনটেন্ট রাইটার ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
বাংলা কনটেন্ট রাইটিং ওয়েবসাইটে কাজ করার উপায় কি?
বাংলা কনটেন্ট রাইটিং ওয়েবসাইটে কাজ করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি বাংলা ব্লগ ওয়েবসাইট খুলতে হবে। আপনি অন্যের ওয়েবসাইটেও বাংলা লিখে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কিছু কিছু ওয়েবসাইট যেমন fiverr, upwork ইত্যাদি মার্কেটপ্লেস গুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলেও আপনি কনটেন্ট রাইটিং করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কন্টেন্ট রাইটিং করে আই এর উপায় কি?
ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে কনটেন্ট রাইটিং করে আপনি খুব সহজে অর্থ রোজগার করতে পারেন। এর জন্য বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলোতে আপনাকে একাউন্ট খুলতে হবে এবং সেখানে বিড করার মাধ্যমে আপনি কনটেন্ট রাইটিং করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।