ভুমিকা
আপনি কনটেন্ট রাইটিং এ ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী? কিন্তু আপনার আগের কোন অভিজ্ঞতা নেই? চিন্তা করবেন না, এটা আপনার কাছে প্রথমের দিকে একটু কঠিন মনে হতে পারে। অনেক সফল কনটেন্ট রাইটার আছেন, যারা কোন পেশাগত অভিজ্ঞতা ছাড়া শুরু করেছিলেন। এটি শুরু করার জন্য আপনার শুরু করার সঠিক উপায় জানা থাকা, অদম্য ইচ্ছা এবং দৃঢ় মানসিকতা যদি থাকে এবং আপনি যদি কিছুটা সময় এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন তাহলে, খুব সহজেই একজন সফল কনটেন্ট রাইটার হতে পারবেন। একজন সফল কনটেন্ট রাইটার হতে গেলে নিম্নলিখিত চর্চা গুলো আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে। চলুন জেনে নেই কি সেই নিয়মিত চর্চা করার বিষয়গুলো?
ভালো কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার উপায়
১. পড়াশুনা ও গবেষণা করুন
একজন ভালো কনটেন্ট রাইটার/লেখক হওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল, আপনাকে বেশি বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে এবং সেই সম্পর্কে গবেষণা করতে হবে। সফল কনটেন্ট রাইটাররা কিভাবে লিখেন, তাদের বিভিন্ন লেখা প্রবন্ধ, বই এবং ব্লগ পোস্ট গুলো পড়ুন। এটা আপনাকে তাদের লেখার শৈলী এবং তাদের কনটেন্ট এর গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে। আপনাকে লেখার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যাকরণের নিয়ম এবং লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে ভাবতে হবে।
২. ব্লগ শুরু করুনঃ
আপনার লেখা এবং দক্ষতা চর্চা করার একটি অসাধারণ উপায় হলো একটি ব্লগ শুরু করা। আপনার ভাললাগা বিষয়গুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে থাকুন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে এবং ব্লগ সাইট ইত্যাদিতে প্রচারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এর পাশাপাশি একটি পোর্টফলিও তৈরীর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এই লেখাগুলো আপনাকে পোর্টফলিও তৈরি করতে সাহায্য করবে। পোর্টফলিও তৈরি হয়ে গেলে আপনি আপনার সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট বা বায়ারদের দেখাতে পারবেন।
৩. লেখক কমিউনিটিতে যোগ দিনঃ
অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কনটেন্ট রাইটার কমিউনিটি ও ফোরাম থাকে। সেখানে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার লেখার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাদের নিকট শেয়ার করুন। আপনি আপনার লেখার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাদের মতামত গ্রহণ করুন এবং সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করুন।
৪. অনলাইন কোর্স নিনঃ
অনলাইনে কন্টেন্ট রাইটিং এর উপর বিভিন্ন ধরনের ফ্রি ও পেইড উভয়ই কোর্স পাওয়া যায়। কনটেন্ট রাইটিং সম্পর্কে মৌলিক বেসিক ধারণা নেওয়ার জন্য আপনি যেকোনো কোর্স নিতে পারেন। এই কোর্সগুলো আপনাকে লেখার ধরন, লেখার গুণগত মান বৃদ্ধি, ব্যাকরণ এবং মার্কেটিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা দিয়ে আপনার রাইটিং ক্যারিয়ারকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।
৫. প্রাকটিস প্র্যাকটিস এবং প্রাকটিসঃ
কনটেন্ট রাইটিং এর উপর দক্ষতা অর্জনের জন্য প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই। আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন, ততই আপনার লেখার কৌশল, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং লিখুন যেকোনো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে, মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে যান। প্রতিদিন লিখুন এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে লিখুন বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে লিখুন এতে লেখা সম্পন্ন করার সময় কমবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
কনটেন্ট রাইটারের প্রয়োজনীয় ডিভাইস কি কি?
একজন কনটেন্ট রাইটারের প্রয়োজনীয় ডিভাইস গুলো কি কি হবে সেটি নির্ভর করে মূলত তার কাজের ধরন, বাজেট এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। কন্টেন্ট রাইটিং কাজ যেহেতু বিভিন্ন রকমের হয়, তাই কিছু মৌলিক ডিভাইস রয়েছে, যা প্রতিটি কন্টেন্ট রাইটারের থাকা উচিত। চলুন সেই সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নেই।
কম্পিউটার
ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার হলো কন্টেন্ট রাইটারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। একটি মোটামুটি ভালো মানের কম্পিউটারে দ্রুত প্রসেসর, পর্যাপ্ত RAM এবং SSD স্টোরেজ থাকলে ভালো হয়। তবে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনটি বড় সাইজের এবং দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ থাকলে লোডশেডিং এর মত সমস্যার সময় লেখালেখির কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
ইন্টারনেট সংযোগ
একজন কনটেন্ট রাইটারের ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে, যাতে করে লেখক কনটেন্ট লেখার বিষয়াবলী সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য উপাত্ত ও অনুসন্ধান করে লেখার কাজ চালাতে পারেন। এছাড়া তার নিজের লেখাগুলো অন্যদের কাছে শেয়ার করার জন্য অথবা ক্লায়েন্টদের নিকট কাজ জমা দেওয়ার জন্য এই ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রয়োজন।
স্মার্টফোন
কনটেন্ট রাইটারের জন্য স্মার্ট ফোন থাকা বাড়তি একটি ধরনের সুবিধা হতে পারে। কারণ কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করার সময়ে একই সাথে লেখার কাজ এবং তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ করা সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন ব্যাপার। সেই ক্ষেত্রে স্মার্টফোন হাতে থাকলে কনটেন্ট লেখার বিষয়গুলি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা এবং লেখার মাধ্যমে সেটি উপস্থাপন করা অনেকটা সহজ হয়। এছাড়া কন্টেন্ট এর মধ্যে ছবি অথবা ভিডিও যুক্ত করার প্রয়োজনে স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রিন্টার
একজন কনটেন্ট রাইটার তার লিখিত কনটেন্ট এর প্রুফরিডিং এবং সম্পাদনা কাজ সহজ করার জন্য লিখিত কনটেন্ট এর প্রিন্টআউট করে নিতে পারেন। এই জন্য তার একটি প্রিন্টার হলে প্রুফরিডিং কাজ সহজ হয়ে যায়।
অন্যান্য ডিভাইস
একজন কন্টেন্ট রাইটার এর উপরে উল্লেখিত ডিভাইস ছাড়াও ট্যাবলেট, ই-রিডার, হেডফোন এবং ভয়েস রেকর্ডার এর জন্য মাইক্রোফোন ইত্যাদি ডিভাইস থাকলে গবেষণার কাজ এবং ধারণা লিপিবদ্ধ করার কাজগুলো সহজে করতে পারেন, এতে সময় অনেক সাশ্রয় হয়।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
একজন কনটেন্ট রাইটার সাধারণত যে ভুলগুলো করে থাকেন সেগুলো হল- প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড রিসার্চ না করা, টার্গেট অডিয়েন্স বুঝতে অসমর্থতা, ভুল তথ্য সরবরাহ, কপি পেস্ট করা, কনটেন্টের স্ট্রাকচার সঠিকভাবে অনুসরণ না করা, মেটা ডিস্ক্রিপশন, হেডিং এবং অপটিমাইজড টাইটেল ব্যবহার না করা। এই ভুলগুলো একজন কনটেন্ট রাইটারকে কখনো করা যাবে না।
হ্যাঁ, কনটেন্ট রাইটিং একটি পেশা হিসেবে গণ্য হতে পারে। এটি একটি ক্যারিয়ার হিসেবে অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং এটি কে সম্প্রসারণশীল পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যেকোনো উদ্বেগী লেখকগণ, ব্লগারগণ, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ওয়েবসাইট লেখক, ডিজিটাল মার্কেটার, কপিরাইটার ব্যক্তিগণ কন্টেন্ট রাইটিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
কনটেন্ট রাইটাররা ইন্টারনেট থেকে বেশি আয় করতে পারেন যেসব কনটেন্ট লিখে সেগুলো হল- এসইও অপটিমাইজড কনটেন্ট, টেকনিক্যাল কনটেন্ট, ব্লগ পোস্ট কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট, ইমেইল কনটেন্ট ইত্যাদি। তবে একথাও ঠিক যে, একজন কনটেন্ট রাইটারের অনলাইন আয় নির্ভর করে তার কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ইত্যাদির উপর।
উপসংহার
কনটেন্ট রাইটিং হল ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রটেজির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সৃজনশীল চিন্তা অসাধারণ লেখনি দক্ষতা এবং একটি উন্নত গবেষণার ফলাফল হলো কনটেন্ট ও কনটেন্ট রাইটিং। এই কনটেন্ট ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইত্যাদির জন্য বেশি প্রস্তুত করা হয়। আধুনিক কনটেন্ট-এ ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি যুক্ত করা হয় যাতে করে এর অর্থ পাঠক খুব সহজেই বুঝতে পারে। একটি কনটেন্ট তৈরির জন্য কার্যকর শিরোনাম, যথাযথ অনুসন্ধান SEO, গবেষণা, মার্কেটিং ইত্যাদি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কন্টেন্ট মার্কেটিং, কনটেন্ট উন্নত করতে এবং ভালো ফলাফল অর্জন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই মনে রাখবেন শুধুমাত্র কনটেন্ট তৈরি করাই নয়, কনটেন্টটি থেকে যাতে এর ব্যবহারকারীরা খুব সহজে এর বিষয়বস্তু বুঝতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।