আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৪
আদিবাসী জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অধিকারকে সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদিবাসী দিবস পালন করা হয়। এই দিনটি প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে।
এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আদিবাসী জনগণের অধিকার ও মর্যাদা ও রক্ষা করা এবং তাদের সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনযাত্রার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এই দিনটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেমন- আলোচনা সভা ,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাংকন ইত্যাদি যাতে আদিবাসীদের অভিজ্ঞতা সমস্যা ও দাবি সমূহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
প্রতিবছর আদিবাসী দিবস পালন করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বেছে নেয়। ২০২৪ সালের আদিবাসী দিবস পালনের নির্ধারিত মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল-
'আদিবাসীদের অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে অধিকতর সামিল করুন'-(Protecting the rights of Indigeonous Peoples in Voluntary Isolations and Initial Contact)
জাতিসংঘের তথ্য মতে সারা বিশ্বের ৭০টি দেশে প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী বসবাস করে থাকে যাদের অধিকাংশই অধিকার বঞ্চিত। অনেক দেশের আদিবাসীদেরকে স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি, আবার কোন কোন দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতী হিসেবে আদিবাসীদেরকে পরিচয় করানো হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ আদিবাসী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেন। পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছেন চাকমা, গারো, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, লুসাই, সাঁওতাল, ওরাও, পাহাড়ি, রাজোয়ার, মাহাতো ইত্যাদি সম্প্রদায়ের আদিবাসী জনগণ। বাংলাদেশ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের আদিবাসীদেরকে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবেই পরিচয় করাতে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৩ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর গৃহীত এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিবছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। আদিবাসী সম্প্রদায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন শিক্ষা সংস্কৃতি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়।
এই বৈষম্যর অন্যতম প্রধান দিক হলো বাংলাদেশের জনসংখ্যা, যেখানে মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘু হিন্দুরা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও জাতি গোষ্ঠী দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সকল জাতিগোষ্ঠী দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ ভাবে অবদান রেখে চলেছে এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করেছে। একটি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বিশেষ করে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যেমন চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, ওরাঁও, মুন্ডারী ইত্যাদি লোকজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ভূমি দখল, যথাযথ ভাবে আইনি ন্যায্যতা না পাওয়া, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে মূলধারার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা ইত্যাদি ভাবে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী কি বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ও অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী সহ আদিবাসী জনগোষ্ঠীরাও বৈষম্যর স্বীকার হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন আদিবাসী জনগোষ্ঠী। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী চাকমা, গারো, মারমা এবং সমতলে বসবাসকারী সাঁওতাল, ওরাও, পাহান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের আদিবাসী লোকজন চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সমস্যা, নিজের ভূমি ও বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, নির্যাতন, অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদে ন্যায্য বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত, নিজের সংস্কৃতি বিকাশ ও চর্চা করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক মতামত ও প্রতিনিধিত্বে অংশগ্রহণ এর সুযোগ না থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন হন। এই ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আদিবাসী সংগ্রাম করতে অনেক আদিবাসী সংগঠন তাদের নিজেদের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আদিবাসী সম্প্রদায় বর্তমানে যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত করানো হয়, যারা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ভাষা ও নিজ সংস্কৃতি সংরক্ষণ, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব, ভূমি অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। আদিবাসী অধিকারের স্বীকৃতি ও সুরক্ষার অভাব এই সকল সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ভোটাধিকারহীনতা ও নিজ দেশ ত্যাগের মতো চ্যালেঞ্জ এর দিকে পরিচালনা করেছে, যা বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা ও সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে।