কেন কমে যায় পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা?

টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের একটি গুরুত্বপুর্ন হরমোন যা পুরুষের যৌনাঙ্গ এবং টেস্টিসে বা অন্ডকোষে উৎপন্ন হয়।.এটি পুরুষ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- পুরুষের যৌন বৈশিষ্ট্য উন্নয়ন, যৌন অঙ্গের বৃদ্ধি,পেশী গঠন এবং হাড়ের গঠন ইত্যাদি। টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এর অভাব বা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত টেস্টোস্টের হরমোন ক্ষরণের কারণে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি দুর্বলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।


অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণের কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা

শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষের পুরুষাঙ্গের বিকাশ, যৌন চাহিদা, হাড়ের শক্তি ও বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করে। কিন্তু এই হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন এই সম্পর্কে জেনে নেই-

যৌন চাহিদা বৃদ্ধি- এই হরমোনের প্রভাবে যৌন চাহিদা অতি বৃদ্ধি হতে পারে, স্খলনে নিয়ন্ত্রণ সমস্যা, যৌনাঙ্গে অতিরিক্ত লোম বা চুলের বৃদ্ধি ইত্যাদি।

হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি- টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পেলে উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি ধমনীর রোগ, হৃদপিণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ার মত রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

ত্বকের সমস্যা- মুখে ও পিঠে অতিরিক্ত লোম ও তৈলাক্ততা, মুখমণ্ডলে ব্রণ, চুল পড়া ইত্যাদি।

মানসিক সমস্যা- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, বিরক্তিভাব, উদ্বেগ, বিষন্নতা ইত্যাদি।

মূত্রনালীর সমস্যা- প্রস্রাবের সমস্যা ও জ্বালাপোড়া, প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া।

শ্বাসকষ্ট- ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

হাড়ের সমস্যা- অস্টিওপোরোসিস এর সমস্যা।

এছাড়া এই হরমোন এর তারতম্য ঘটলে যে সকল লক্ষণাবলী দেখা দিতে পারে সেগুলো হল- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হওয়া, মাংস পেশীতে ব্যথা সৃষ্টি হওয়া, মাথাব্যথা, দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।


Why does the level of male testosterone hormone decrease

বয়স অনুযায়ী টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন- টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যেই কমে যাওয়া শুরু হয়। তবে সেই ক্ষেত্রে কারোও যদি স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ৭০ বছরের পর এমনকি ৮০ বছর বয়সেও পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে এবং শুক্রাণুর উৎপাদন ও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন- নারী পুরুষের শরীরে বয়স অনুযায়ী স্টেরনের মাত্রা থাকা প্রয়োজন-

পুরুষ ২০ - ৪৯ বছর বয়সে ৪.৫৬ থকে ২৮.২ nmol/L এবং ৫০+ বছর বয়সে ২.৪৯ থেকে ২১.৬ nmol/L
মহিলা- ০.১৯৮ --- ২.৬৭ nmol/L

কেন কমে যায় টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা? 

টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি হয় পুরুষের অন্ডকোষে। সুতরাং আঘাত জনিত কোন কারণ বা দুর্ঘটনার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে অণ্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে টেস্টোস্টেরন এর উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে শরীরের অতি ঘাম সৃষ্টি হলে, কোন গরমস্থানে বসে কাজ করলে অথবা শারীরিক তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এর উৎপাদন ব্যাহত হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ যাদের বেশি অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের টেস্টোস্টেরন এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যৌন সংক্রান্ত কোনো রোগ, ভাইরাস সংক্রমণ, অন্ডকোষে টিউমার ও জন্মগতভাবে কোন দোষ থাকলে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যেতে পারে।

পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি হওয়ার কারণে শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি এর মাত্রা অতিরিক্ত হওয়াটাও শরীরের জন্য ভালো খবর নয়। সুতরাং এর মাত্রা যাতে স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। বেশিরভাগ চিকিৎসক মনে করেন- পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অধিক এর থেকে এর ঘাটতি দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। সুতরাং আপনার শরীরে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রার তারতম্য মনে হয়, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এছাড়া এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য যে সকল খাবারে হরমোন এর ঘাটতি পূরণ হয় বিশেষ করে ডিম, লাল মাংস, ব্রকলি, টাটকা শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন